
গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে শুরু থেকে মারমুখী ছিল পুলিশ। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত পুলিশকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবেই ব্যবহার করা হয়।
যার ফলে নির্বিচারে গুলি, হত্যা, গণগ্রেপ্তার ও নির্যাতনে অভিযুক্ত পুলিশ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি তোপের মুখে পড়ে। হামলা-ভাঙচুর করা হয় থানা ও ট্রাফিক স্থাপনায়। পুলিশ সদস্যদের মারধর ও হত্যার ঘটনাও ঘটে।
সরকার পতনের পর সাত দিন পুলিশকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আস্তে আস্তে আড়ষ্টতা ভেঙে পুলিশের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসতে থাকে। বাহিনীকে সচল করতে তখন নতুন গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পুলিশের যেসব সংস্কারের কথা বলা হয় তার মধ্যে অন্যতম ছিল পোশাক পরিবর্তনের উদ্যোগ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাহিনীর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ পুলিশের পোশাক নিয়ে অস্বস্তির কথাও জানিয়েছিলেন। অস্বস্তির থেকে পুলিশের অনেক সদস্যও একই দাবি তুলেছিলেন গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাজারবাগের বিদ্রোহে।
শেষমেশ শুধু পুলিশ নয়, র্যাব ও আনসার বাহিনীর পোশাকেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পুলিশের নতুন পোশাক হতে যাচ্ছে ‘আয়রন’ রঙের, র্যাবের ‘অলিভ’ আর আনসার বাহিনীর পোশাক হতে যাচ্ছে ‘গোল্ডেন হুইট’ রঙের।
সোমবার ২০ জানুয়ারি সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
জানা গেছে, পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনীর জন্য যে তিন রঙের পোশাক বেছে নেওয়া হয়েছে তা প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদন দিলেই আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হবে মাঠ পর্যায়ের পুলিশকে।
২০২০ সাল থেকেই পুলিশের পোশাক পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছিল। ২০২১ সালের শুরুর দিকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের জন্য বেশ কয়েকটি পোশাকের ট্রায়ালও হয়। তবে নানা কারণে সেই নতুন পোশাক আর পাননি পুলিশ সদস্যরা। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন পোশাক পেতে যাচ্ছেন বাহিনীটির সদস্যরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাহিনীর সেবা মান ও মানসিকতায় পরিবর্তন আনা না গেলে শুধু পোশাক পরিবর্তন খুব বেশি কাজে আসবে না। আগেও অনেকবার পোশাক পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু পুলিশের কোনো পরিবর্তন হয়নি। পোশাক পরিবর্তনের পরপরই পুলিশের মনোভাব পরিবর্তন জরুরি।