
নিজের বদ নযর নিজের উপর, নিজের সন্তানদের উপর এবং সম্পদের উপর লাগতে পারে:
বণি ইসরাইলের এক বাদশাহ ছিলো। সে দুইজন পুত্র সন্তান রেখে মারা যায়। তার পরিত্যক্ত সম্পদ ছিলো আট হাজার দীনার। পুত্রদ্বয় ঐ অর্থ-সম্পদ সমান ভাগে ভাগ করে নিলো।
উল্লেখ্য যে, তারা দুই ভাই। এক ভাই ছিলো ঈমানদার। অপরজন ছিলো কাফির। এক ভাই তার এক হাজার দীনার দিয়ে এক খন্ড জমি ক্রয় করলো। আর এক ভাই এক হাজার দীনার মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান করে দিল। আর বললো, আয় বারে ইলাহী! আমার ভাই এক হাজার দীনার দিয়ে পৃথিবীর ভূমি ক্রয় করেছে। আর আমি এক হাজার দীনারের মাধ্যমে জান্নাতের জমি খরিদ করলাম। এরপর প্রথম ভাই আরো এক হাজার দীনার ব্যয় করে নির্মাণ করলো একটি বাড়ী। দ্বিতীয় ভাই তখন আরো এক হাজার দীনার বণ্টন করে দিলো দুঃস্থদের মাঝে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের জন্য। আর দোয়া করলেন, আয় মহান রব তায়ালা আল্লাহ পাক! আমার ভাই এক হাজার দীনার দিয়ে বাড়ী তৈরী করলো পৃথিবীতে। আর আমি আমার এক হাজার দীনার দিয়ে বাড়ী ক্রয় করলাম জান্নাতে। এরপর পুনরায় এক হাজার দীনার খরচ করে প্রথমজন বিবাহ করলো। তখন দ্বিতীয়জন মহান আল্লাহ উনার পথে হাজার দীনার খরচ করে প্রার্থনা করলো, আয় মহান আল্লাহ পাক! আমার এবারের অর্থের বিনিময়ে আপনি জান্নাতবাসিণী কোনো নারীর সাথে আমার বিবাহ দিয়ে দিন। তারপর প্রথমজন পুনরায় এক হাজার দীনার খরচ করে গোলাম-বাঁদী ও তৈজসপত্র ক্রয় করলো। দ্বিতীয়জন তখন এক হাজার দীনার দান করে প্রার্থনা করলো, আয় মহান আল্লাহ পাক! এই এক হাজারের বিনিময়ে আমি আবেদন জানালাম, জান্নাতের পরিচারক-পরিচারিকা ও আসবাবপত্রের।
একদিন কথা প্রসঙ্গে সেই মু’মিন ভাইকে লক্ষ করে কাফির ভাই বললো, ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততি সবদিক থেকে আমি আপনার থেকে শ্রেষ্ঠ। দেখুন! আমার কত প্রভাব প্রতিপত্তি, সম্মান, মর্যাদা।
একদিন সে বাগানে প্রবেশ করলো। ধন-সম্পদ নয়নাভিরাম বাগান, ক্ষেত খামার দেখে আতœতৃপ্তি লাভ করলো। মনে মনে বললো, আমি মনে করি না যে, আমার এ বাগান ও সম্পদ কখনো ধ্বংস হবে। অর্থাৎ সে মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া ভুলে গেল। অতিরিক্ত আত্মপ্রাসাদের কারণে অহংকারী হয়ে পড়লো। তার বদ নযর তার বাগানের উপর পড়লো। ফলে তার ধন-সম্পদ বাগান সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেল। কেবল আক্ষেপ করা ব্যতীত তার আর কোন উপায় রইলো না। সেটাই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফে উল্লেখ করেছেন-
وَلَوْلَا إِذْ دَخَلْتَ جَنَّتَكَ قُلْتَ مَا شَاءَ اللهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ إِنْ تَرَنِ أَنَا أَقَلَّ مِنْكَ مَالًا وَوَلَدًا
অর্থ: তুমি যখন ধন-সম্পদ ও সন্তান আমাকে তোমার থেকে কম দেখলে তখন তোমার বাগানে প্রবেশ করে তুমি কেন বললে না যে-
مَا شَاءَ اللهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি যা চান তাই হয়। আর মহান আল্লাহ পাক উনার সাহায্য ব্যতীত কোন শক্তি নেই। (পবিত্র সূরা কাহ্ফ শরীফ-৩৯)
হযরত ইমাম বায়হাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার শুয়াবুল ঈমান কিতাবে উল্লেখ করেছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোনো কিছু দেখে পছন্দ হলে কেউ যদি বলে, “মাশা আল্লাহ, লা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” তবে তার কোনো ক্ষতি হবে না। সুবহানাল্লাহ!
-আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।