
৬৮৩ হিজরী সনের ঘটনা। দিল্লী নগরী তখন আওলিয়া কিরামগণের আবাসভূমি, ভারতীয় সুলতানগণের রাজসভা, কবিদের মঞ্চ এবং উলামাদের বিদ্যাপীঠে।
এ সময় দিল্লির রাজসভাকে অলঙ্কৃত করেছিলেন মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী হযরত আমীর খসরু দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি। হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনাকে উপমহাদেশের দ্বিতীয় তবকার আওলিয়াগণের মধ্যে পরিগণিত করেছেন। তিনি উপমহাদেশের সুবিখ্যাত ওলী হযরত নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরীদান বর্গের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।
হযরত আমীর খসরু দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যুগে হৃদয়নগরী দিল্লীতে এসে উপনীত হন। তিনি গিয়াসউদ্দিন বলবন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ভাগিনা কুতলু খান যিনি হাজচু বা চাচ্চু খান নামেও পরিচিত ছিলেন, উনার দরবারে উপনীত হন। কুতলু খান ছিলেন অত্যন্ত দাতা ব্যক্তি।
ফারিশতা গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, কুতলু খান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবারে মিশর, সিরিয়া, রোম, বাগদাদ, ইরাক, খুরাসান, তুর্কিস্তান প্রভৃতি দেশ হতে আওলিয়া ও কবিগণ এসে উনার দরবার অলঙ্কৃত করতেন এবং তিনি উনাদেরকে ভরে ভরে দান করতেন। পরবর্তীতে তিনি সুলতান বলবন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পুত্র বুগরা খান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার অলঙ্কৃত করেন এবং উনার সাথে লখনৌতির বিদ্রোহী শাসক তুগরূলের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন যেমনটি তারীখে ফারিশতার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে।
সুলতান গিয়াসউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পুত্র হযরত মুহম্মদ ক্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যুগে তাতারী বাহিনী লাহোর আক্রমণ করে। তাতারীদের বিরুদ্ধে হযরত মুহম্মদ ক্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি অংশগ্রহণ করেন। উনার সাথে উক্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন হযরত আমীর খসরু দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং খাজা হাসান দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি। হযরত মুহম্মদ ক্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যুহরের নামায আদায় করছিলেন এমন সময় তাতার বাহিনী আক্রমণ শুরু করে। হযরত ক্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি ও মুছল্লিগণ নামায থেকে ফারিগ হয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন। তারিখে ফারিশতার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে যে, উক্ত পবিত্র সংগ্রাম চলাকালীন একটি তীরের আঘাতে হযরত ক্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি শাহাদাতের সুধা পান করেন। তাতারীরা হযরত খাজা হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে আটক করে বলখে নিয়ে যায়।
হযরত আমীর খসরু দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই ঘটনায় অত্যন্ত শোকাহত হয়ে মারসিয়া বা শোকগাথা রচনা করে দিল্লিতে প্রেরণ করেন। হযরত শিবলী নুমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি আমীর খসরু দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনচরিত এর মধ্যে লেখেন কয়েক মাস যাবত ঘরে ঘরে উক্ত শোকগাথা পাঠ করা হতো ও শুহাদাদের জন্য মানুষেরা শোক বিহ্বল হয়ে কান্না করতো। (সংকলিত)