
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর বাকি কয়েকদিন। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের নির্বাচনী প্রচারণা। ভোটের আগে দেশজুড়ে নিজেদের চূড়ান্ত জনমত জরিপ চালিয়েছে সিএনএন। জরিপে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমানে সমান লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। এসএসআরএস এই জরিপ পরিচালনা করেছে, জরিপে ৪৭ শতাংশ সম্ভাব্য ভোটার ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলাকে এবং ৪৭ শতাংশ সম্ভাব্য ভোটার রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন। এর আগে সেপ্টেম্বরে হওয়া জরিপে কমলা ৪৮ শতাংশ ও ট্রাম্প ৪৭ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পান।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর কমলা ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হন। বাইডেন সরে দাঁড়ানোর সময় কমলার প্রতি তাঁর সমর্থন দিয়ে যান। সে সময় সিএনএনের জনমত জরিপে ৪৯ শতাংশ নিবন্ধিত ভোটার ট্রাম্পকে ও ৪৬ শতাংশ ভোটার কমলাকে সমর্থন দিয়েছিলেন।
এ বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে সিএনএন যে কয়টা জরিপ চালিয়েছে, তার কোনোটিতেই (প্রথমে বাইডেন, তারপর কমলার বিপক্ষে) ট্রাম্প কখনো প্রত্যাশিত ফলাফলের বাইরে যাননি। তিনি আরও দুবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেছেন। কোনোবারই জনমত জরিপে তার এবারের মতো অবস্থান ছিল না। এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির অবস্থা বেশ টালমাটাল। কিন্তু জনমত জরিপগুলোতে উল্লেখ করার মতো স্থিতিশীল অবস্থা দেখা গেছে।
জরিপে দেখা গেছে, ৮৫ শতাংশ সম্ভাব্য ভোটার যাঁরা প্রার্থী পছন্দ করে ফেলেছেন, তারা তাদের সিদ্ধান্তে অটল আছেন। তারা জানেন, তাঁরা কোন দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে চলেছেন। মাত্র ১৫ শতাংশ বলেছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা পছন্দ পরিবর্তন করেছেন। যারা পছন্দ ঠিক করে ফেলেছেন, তাঁদের মধ্যে ৫০ শতাংশ কমলাকে ও ৪৯ শতাংশ ট্রাম্পের পক্ষে বলেছেন। মাত্র ১ শতাংশ অন্য প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছেন।
আমেরিকার জনমনে ভাবনা
নির্বাচনী প্রচারণার শেষ সময়ে দেশটির নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সরকার পরিচালনা ও দেশ যেভাবে চলছে, তা নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব আরও গভীর হয়েছে। প্রায় ৪৯ শতাংশ ভোটার বলেছেন, এক বছর আগের চেয়ে তাঁরা অর্থনৈতিকভাবে খারাপ অবস্থায় আছেন। যেখানে মাত্র ১৬ শতাংশ ভোটার বলেছেন গত ১২ মাসে তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। বর্তমান অবস্থা এ বছরের শুরুর দিকের অবস্থা থেকেও খারাপ। এ বছরের শুরুতে ৪১ শতাংশ ভোটার আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার এবং ২২ শতাংশ ভালো হওয়ার কথা বলেছিলেন।
প্রার্থী মূল্যায়ন
নিবন্ধিত ভোটাররা কমলা (৪১ শতাংশ পছন্দ থেকে ৫২ শতাংশ অপছন্দ) ও ট্রাম্প (৪১ শতাংশ থেকে ৫৪ শতাংশ) উভয়ের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থন সেপ্টেম্বরের মতোই আছে প্রায়। কমলার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সামান্য বেড়েছে।
কমলাকে সমর্থন দেওয়া অর্ধেকের বেশি ভোটার বলেছেন, তাঁরা ট্রাম্পের বিরোধিতা (৪৫ শতাংশ) করতে নয় বরং কমলাকে (৫৪ শতাংশ) সমর্থন করে তাকে ভোট দেবেন। তবে গত মাসের তুলনায় ট্রাম্পের বিরোধিতা করতে গিয়ে (কমলার প্রতি) ভোট ৫ পয়েন্ট বেড়েছে। নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিকে এসে ট্রাম্পকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিচ্ছেন কমলা, এটি এর প্রভাবে হতে পারে।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের সমর্থকরা তার প্রতি জোরালো সমর্থন (৭৩ শতাংশ) জানিয়েছেন। তবে ১৬ শতাংশ বা তার থেকে কিছু বেশি ভোটার বলেছেন, দুই প্রার্থীর কেউই প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন। সবচেয়ে উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, ২৯ শতাংশ ভোটার মনে করেন দুই প্রার্থীর কেউই সৎ ও বিশ্বস্ত নন। ১৯ শতাংশ বলেছেন, কোনো প্রার্থীই তাদের মতো মানুষদের কথা ভাবেন না।
যারা ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দেবেন বলে ঠিক করেছেন, তাঁদের ৫৬ শতাংশ বলেছেন, ট্রাম্পের আচরণ ও মেজাজের কারণে তাঁরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর ৫১ শতাংশ বলেছেন, ফৌজদারি মামলায় ট্রাম্পের দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং তার বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধমূলক মামলার কারণে তাঁরা ট্রাম্পকে ভোট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ৪৬ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা নিয়ে সংশয়ের কারণে তাকে ভোট না দেওয়ার কথা বলেছেন।
কমলার বেলায় তার আচরণ ও মেজাজের জন্য ৪৫ শতাংশ ভোটার তার পক্ষে এবং ৩৪ শতাংশ বিপক্ষে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন। বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলার মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা প্রশ্নে ৪৯ শতাংশ পক্ষে এবং ২৭ শতাংশ তার বিপক্ষে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলার ভূমিকাকে বেশির ভাগ ভোটার নেতিবাচক হিসেবে দেখেন। ৪৬ শতাংশ ভোটার বলেছেন, এ কারণে তাঁরা কমলার বিপক্ষে ভোট দেবেন। ২৬ শতাংশ এ কারণে কমলার পক্ষ নেওয়ার কথা বলেছেন।
অল্প কয়েকজন ভোটার মনে করেন, কমলার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাব্যতা এবারের নির্বাচনের ফলাফলে ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে ৬৫ শতাংশ ভোটার মনে করেন, এটা কোনো ধরনের পার্থক্য গড়ে দেবে না।