
মোঃ ওয়াহেদ আলী-লালমনিরহাট :
লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এরই মধ্যে নদী তীরবর্তী নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আজ সোমবার ভোর থেকে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরই মধ্যে তলিয়ে গেছে হাতীবান্ধা, আদিতমারী ও সদর উপজেলার ১২ গ্রাম।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে চার হাজারের বেশি পরিবার। ডুবে গেছে আমন ধানের বীজতলাসহ ও ফসলি জমি। বন্যা পরিস্থিতি এড়াতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, রোববার দুপুরে দেওয়া এক বার্তায় দেশের অভ্যন্তরে ও ভারতে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে কুড়িগ্রামসহ রংপুর বিভাগের চার জেলার নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
জানা গেছে, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করে আজ সকাল ৬টায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে আবার সকাল ৯টায় নিচে নামে তিস্তার পানি। এতে তিস্তার চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন ধরনের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধানগুলো তলিয়ে গেছে। নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষজন বন্যা ও নদীভাঙন আতঙ্কে পড়েছে।
এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৮-১০টি চর এলাকায় পানি উঠতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টের পানির লেভেল পরিমাপক নুরুল ইসলাম বলেন, উজানের ঢল ভারী বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ০১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৬টায় পানি বিপৎসীমার ০৩ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হয়। পানি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।
পাউবো কুড়িগ্রাম বলছে, তিস্তা ও দুধকুমারের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার পূর্বাভাস থাকলেও কুড়িগ্রামে তিস্তার নিম্নাঞ্চলে তেমন প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম। তবে দুধকুমারের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানির সমতল আগামী তিন দিন বৃদ্ধি পেতে পারে। এ সময় তিস্তা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুর জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলসমূহ প্লাবিত হতে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ৭২ ঘণ্টা (১৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত) দেশের রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারতের মেঘালয়, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, বিহার ও ত্রিপুরা প্রদেশে বিচ্ছিন্নভাবে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে রংপুর বিভাগের তিস্তা ও দুধকুমার নদের পানি আগামী তিন দিন বৃদ্ধি পেতে পারে। এ সময় এসব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জন জাগরণকে বলেন, ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।