
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এক ভুয়া নারী চিকিৎসককে আটক করেছে পুলিশ। তার নাম পাপিয়া আক্তার স্বর্ণা (২২)। গতকাল রবিবার হাসপাতালটির তৃতীয় তলায় নাক-কান-গলা বিভাগে এক রোগীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সময় অপর এক চিকিৎসকের হাতেই আটক হন স্বর্ণা।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো. ফারুক। তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভুয়া চিকিৎসক স্বর্ণাকে আটক করে আমাদের কাছে সোপর্দ করেছে। পরবর্তী সময়ে আমরা ওই তরুণীকে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে তুলে দিয়েছি। তারাই তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।’
নুরুল আলম নামে যেই রোগীর কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয় তার বাড়ি কিশোরগঞ্জ। গত বুধবার মুখে টিউমারজনিত সমস্যার কারণে নাক-কান-গলা বিভাগে ভর্তি হন তিনি। তাকে দেখাশোনার জন্য সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী কল্পনা। কল্পনা বলেন, ‘এক আত্মীয়ের মাধ্যমে পরিচয় হয় পাপিয়া নামের ওই মেয়ের সঙ্গে। পাপিয়া নিজেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্টুডেন্ট ও জুনিয়র চিকিৎসক পরিচয় দিয়েছিলেন। চিকিৎসকের অ্যাপ্রনও পরে থাকতেন তিনি।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, অপারেশন দ্রুত করিয়ে দেবেন বলে ৩০ হাজার টাকার চুক্তি করা হয় তার সঙ্গে। সেই চুক্তির ২৮ হাজার টাকা ইতিপূর্বেই নেন পাপিয়া। চুক্তির বাকি ২ হাজার টাকা নিতে তাদের ওয়ার্ডে গিয়েছিলেন গতকাল। আটক স্বর্ণা যে ভুয়া চিকিৎসক সাংবাদিকদের কাছে সেটা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওই রোগী আমার পরিচিত। মূলত তাকে দ্রুত অপারেশন করিয়ে দেওয়ার জন্য নিজেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের কে-৭৮ ব্যাচের স্টুডেন্ট পরিচয় দিয়েছিলাম ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের কাছে। তবে ওয়ার্ডটিতে স্বর্ণা নামে আরও একজন দায়িত্বরত নারী চিকিৎসক ছিলেন, যিনি আমার বিস্তারিত পরিচয় জানতে চান। তখনই তারা বুঝে ফেলেন আমি এখানকার স্টুডেন্ট না।’
জানা গেছে, আটক ভুয়া চিকিৎসকের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার নলুয়া গ্রামে। বাবার নাম আনোয়ার হোসেন বাদল। মনোহরদীর একটি কলেজ থেকে তিনি উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। এক বছর আগে জসিম উদ্দিন নামে এক যুবকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এই নারী। তাকে নিয়ে বকশীবাজার এলাকায় বসবাস করেন।
জসিম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পাপিয়া ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে দাবি করেন। এদিকে স্ত্রী আটক হওয়ার খবর শুনে হাসপাতালে উপস্থিত হন পাপিয়ার স্বামী জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী কেন এই কাজ করেছে আমি কিছুই জানি না। আমি এতদিন পর্যন্ত জানতাম সে মেডিকেল স্টুডেন্ট। আমার কাছেও পরিচয় লুকিয়েছে।’
এই বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘আটক নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।’