
পবিত্র সূরা নূর শরীফ উনার ৫৫ নং আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং আমলে ছলেহ করে; মহান আল্লাহ পাক এই মর্মে ওয়াদা মুবারক দিয়েছেন যে, তিনি নিশ্চিতভাবে তাদের জমিনের খিলাফত প্রদান করবেন। যেমন তিনি খিলাফত প্রদান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদের এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য শক্তিশালী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দ্বীনকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তিনি তাদের ভয়ভীতি শান্তি-নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা আমারই ইবাদত করবে, আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরীক করবে না। আর এরপর যারা অস্বীকার করবে তারাই ফাসিক। ’
মহাপবিত্র আয়াত শরীফ উনার এই বাণী মুবারক যুগে যুগে বাস্তবায়িত এবং প্রতিফলিত হয়েছে। মূলত এটাই স্বাভাবিক। এমনকি বিধর্মীরাও অকপটে মুসলমানদের সম্মানিত ঈমান এবং আমলের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি মুসলমানদের অকৃত্রিম মুহব্বত বিজয়ের মূল রহস্য। সুবহানাল্লাহ!
হেরাক্লিয়াসের স্বীকারোক্তি
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বিজয়ের ধারাবাহিকতা ও রোম সেনাদের পরাজয়ের চিত্র দেখে রোম শাসক হেরাক্লিয়াস তার বাহিনী প্রধানদের লক্ষ্য করে বললো, তোমাদের বিনাশ হোক! তোমরা যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বারবার পরাজিত হচ্ছ, উনারা কি তোমাদের মতো মানুষ নন? তারা বলল, অবশ্যই। সে বললো, সংখ্যায় উনারা বেশি, নাকি তোমরা? তারা বলল, সব যুদ্ধক্ষেত্রে আমরা বেশি ছিলাম। সে বললো, তাহলে তোমরা বারবার পরাজিত হচ্ছ কেন? তখন তাদের বয়োবৃদ্ধ এক সেনা কর্মকর্তা বলল, কারণ উনারা রাতে দাঁড়িয়ে ইবাদত করেন আর দিনের বেলা রোযা রাখেন, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন, সৎ কাজের আদেশ দেন এবং অসৎ কাজ থেকে বাধা দেন, একে অন্যের প্রতি ইনসাফ করেন। আর এর বিপরীতে আমরা মদ পান করি, ব্যভিচার করি, অন্যায় করি, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করি, জুলুম করি, জমিনে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করি। ’ তখন হেরাক্লিয়াস বললো, তুমি আমাকে সত্য বলেছ।
অন্য একটি ঘটনা এরূপ বর্ণিত হয়েছে যে, হেরাক্লিয়াস তার নগরী শাম থেকে পরাজিত হয়ে অবশেষে কনস্টান্টিনোপলে গিয়ে অবস্থান গ্রহণ করলো এবং সেখানে আলাদা এক শাসন গড়ে তুললো। একদা তার এক অনুচর মুসলিমদের বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে তার কাছে গেলে সে বললো, এই জাতি সম্পর্কে তুমি আমাকে কিছু বলো। ওই ব্যক্তি বললো, আমি তাদের এমন বিবরণ দেব, যেন আপনি তাদের স্বচক্ষে দেখছেন। উনারা দিনের বেলা অশ্বারোহী বীর আর রাতের অন্ধকারে দুনিয়াত্যাগী ইবাদতগোজার, জিনিসের মূল্য পরিশোধ করেই উনারা ভোগ করেন, সালাম দিয়ে প্রবেশ করেন, যুদ্ধের ময়দানে অবিচল। হেরাক্লিয়াস তা শুনে বললো, যদি তুমি সত্য বলে থাকো, তাহলে তো উনারা আমার পদতলের এই জায়গাটুকুও দখল করে নেবে। ’
এক বর্ণনায় এসেছে, হেরাক্লিয়াসের সভাসদদের মধ্যে এক খ্রিষ্টান পাদ্রী ছিলো। সে হেরাক্লিয়াসকে বলে, এই আরব উনারা উনাদের মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক মান্যকারী, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার অনুসারী। রাতে দুনিয়াত্যাগী ইবাদতগোজার আর দিনের বেলা রোজাদার, উনাদের সম্মানিত রব উনার যিকির এবং উনাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয় রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র দরূদ শরীফ পাঠে উনারা কখনো গাফিল হন না, আর উনাদের মধ্যে কোনো জুলুম-অবিচার নেই, উনারা একে অন্যের ওপর অহংকার করেন না। উনাদের বৈশিষ্ট্য হলো সততা, আর উনাদের পোশাক হলো ইবাদত। উনারা আমাদের ওপর আক্রমণ করলে ফিরে যান না, আর আমরা আক্রমণ করলে পালান না। উনাদের বিশ্বাস হলো, দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী আর আখিরাত চিরস্থায়ী। ’
তথ্যসুত্র:
* আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া।
* তারিখে তাবারি।
* ফুতুহুশ শাম।