
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার শুরু থেকেই মুসলমানদের প্রথম ও প্রধান শত্রু হিসেবে গণ্য হয়েছিলো ইহুদীরা। যুগে যুগে এই ইহুদীরা মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে আযাব-গযবে এবং তাদের মজ্জাগত শয়তানি এবং কুটকৌশলের কারণে ইতিহাসে চিরকুখ্যাত হয়ে রয়েছে। এরা এতটাই পাপিষ্ট যে, এরা অনেক নবী আলাইহিস সালাম উনাদেরকে পর্যন্ত শহীদ করেছে। নাউযুবিল্লাহ! এদের জঘন্য চরিত্র সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যেও মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন। কারণ এরা যে এলাকাতেই গিয়ে বসতি গড়তো সেখানে প্রথমে তারা স্থানীয়দের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে নিজেদের কার্যসিদ্ধি করতো। এরপর বিশ্বাসঘাতকতা করে সেই অঞ্চলের বাসিন্দাদের ক্ষতি করতো কিংবা প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করতো।
পূর্বে বনী ইসরাঈলে বহুসংখ্যক হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা আগমণ করার কারণে এই ইহুদীরা মনে করেছিলো যে, যতই খারাপ কাজ করা হোক না কেন ইহুদীরা কখনো দোযখে যাবেনা। নাউযুবিল্লাহ!
ইহুদীদের অর্থলিপ্সা অত্যন্ত প্রবল। অর্থোপার্জনে এদের কোনো নৈতিকতার বালাই নেই। সুদের মতো জঘন্য একটি কারবারের সূচনা এদের মাধ্যমেই দুনিয়াতে শুরু হয়েছিলো। নানা ছলা-কলায় অপরের সম্পদ এরা বাগিয়ে নিতো। এছাড়া, ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত এদের রক্তের সাথে মিশে থাকার কারণে পৃথিবীর কোনো ভূখন্ডেই এরা ঠাঁই পায়নি। বরং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশ থেকে এরা বিতাড়িত হয়েছে। পূর্ববর্তীকালে রোমানসহ বিভিন্ন শাসকদের দ্বারা বিতাড়িত হওয়ার পাশাপাশি ১২৯০ সালে ইংল্যান্ড থেকে, ফ্রান্স থেকে ১৩০৬ এবং ১৩৯৪ সালে, ১৩৭০ সালে বেলজিয়াম থেকে, ১৩৮০ সালে চেকোশ্লোভাকিয়া থেকে, ১৪৪৪ সালে হল্যান্ড থেকে, ১৪৫০ সালে ইটালী থেকে, ১৫৫১ সালে জার্মানী থেকে এবং ১৫১০ সালে রাশিয়া থেকে ইহুদীদের বিতাড়িত করা হয়।
ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে রোমকদের আক্রমনের ফলে বহু ইহুদী বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে যায়। এদের মধ্যে কিছু ইহুদী আরবের হেজাজ অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে সম্মানিত হিজরত মুবারক করার পূর্ব পর্যন্ত ইহুদীরা সেখানে অন্যায়ভাবে প্রভাব বিস্তার করে রেখেছিলো। পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক নেয়ার পরই ইহুদীরা বুঝতে পেরেছিলো যে তিনিই হচ্ছেন আখেরী নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কিন্তু এদের উপর চির-লানত বর্ষিত হওয়ার কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে চিনতে পারার পরও তারা আনুগত্য না করে উল্টো মুবারক শানে বিরোধিতা শুরু করলো। নাউযুবিল্লাহ!
এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য যে, ইহুদীরা মনে করেছিলো আখেরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের বংশেই তাশরীফ মুবারক আনবেন। কিন্তু তিনি যখন সম্মানিত কুরাইশ নসবে আগমন করলেন তখন তারা হিংসার বশবর্তী হয়ে উনার বিরোধিতা শুরু করলো। নাউযুবিল্লাহ!
মিথ্যা প্রচারণা, গুজব ছড়ানো, তাওরাত শরীফের আয়াতসমূহের অপব্যাখ্যা করে অথবা বিশেষ বিশেষ আয়াতসমূহ যেগুলোতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে চেনার বিষয়গুলো বর্ণিত রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে লাগলো, গোপন করতে লাগলো। এভাবেই তারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধিতা শুরু করে এসব ঘৃণ্য পন্থায়।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সম্মানিত ভিত্তি মুবারক স্থাপন করেন এবং মদীনা সনদ প্রণয়ন করে সেখানে ইহুদী এবং অমুসলমানদেরও বসবাসের অনুমতি মুবারক প্রদান করেন। তাদেরকে পূর্ণ নাগরিক অধিকার দেয়া হয়। তিনি ইহুদীদের থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন যে, পবিত্র মদীনা শরীফ উনার প্রতিরক্ষা কার্যে ইহুদীরা অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু চক্রান্তশীল ইহুদীরা একদিকে পূর্ণ নাগরিক অধিকার ভোগ করছিলো অন্যদিকে মুনাফিক এবং মুসলমানদের সাথে গুপ্ত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার ক্ষতিসাধনে তৎপর ছিলো। (যদিও পরবর্তীতে ইহুদীদের বিতাড়িত করা হয়েছিলো)
সম্মানিত বদরের জিহাদের সময় ইহুদীরা কামনা করেছিলো যে, মুসলমানগণ যাতে পরাজিত হন। তাই এরা জিহাদ চলাকালে পবিত্র মদীনা শরীফে গুজব রটিয়ে দেয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বদরের প্রান্তরে শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! কিন্তু পরবর্তীতে যখন সত্য প্রকাশ হয়ে গেলো তখন হিংসায় পুড়ে গিয়ে বনী নজীর গোত্রের সর্দার কুখ্যাত ইহুদী কাব বিন আশরাফ পবিত্র মক্কা শরীফে চলে যায় এবং মদীনা শরীফে পুনরায় আক্রমনের জন্য কুরাইশদের উস্কানি প্রদান করতে থাকে। এর কিছুদিন পর সে পবিত্র মদীনা শরীফ ফিরে আসে এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের শান মুবারক কটূক্তি করে কবিতা প্রকাশ করতে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! তার এসব ঘৃণ্য কর্মকান্ড যখন সীমার বাইরে চলে গেলো তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে পেশপূর্বক হযরত মুহম্মদ ইবনে মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই কুখ্যাত শয়তানকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন।
-মুহম্মদ শাহজালাল