
শরীয়তপুর প্রতিনিধি :
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল মোল্লাকে গত ১৪ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করেছে জাজিরা থানা পুলিশ। এর পর থেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছে জালাল মোল্লা ও তার লোকজনের দ্বারা হয়রানি ও জুলুমের শিকার ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
তার বিরুদ্ধে- স্থানীয় নিরীহ ব্যক্তিদের সাথে অন্যায় আচরণ, চাঁদাবাজি, জোরপূর্বক ভূমি দখল, মাদক কারবারি, এলাকার নিরীহ মানুষদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, মারধর ও হত্যার হুমকি দেওয়াসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জালাল মোল্লা একজন উশৃঙ্খল প্রকৃতির ব্যক্তি। তিনি আ.লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে অনেক নিরীহ মানুষকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছেন। তার ধারাবাহিকতা এখনো অব্যহত রয়েছে। তবে, আগে যেমন এলাকার যাকে খুশি তাকেই বিরক্ত করতেন এখন নিজের আত্মীয়-স্বজনদেরও হয়রানি করা শুরু করেছেন। তার প্রধান উদ্দেশ্য অবৈধভাবে অন্যের জমি দখল ও চাঁদা আদায় করা।
গত ২৪ আগস্ট সকালে বড়কান্দি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জালাল মোল্লার চাচাত ভাই রাজা মোল্লার বাড়ীতে হঠাৎ লোকজন নিয়ে গিয়ে বাড়ীর একটি অংশের জমি দখলের চেষ্টা করেন এবং তাদের সেখানে থাকা বাঁশবাগান থেকে বাঁশঝাড় কেটে ফেলেন। পরে ভুক্তভোগী রাজা মোল্লার স্ত্রী বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ জালাল ও তার সহযোগী জাহাঙ্গীর মোল্লাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পরেরদিনই তারা আদালত থেকে জামিনে বেড়িয়ে এসে রাজা মোল্লা ও তার ভাই সাজা মোল্লা এবং তার সাউথ কোরিয়া প্রবাসী শিক্ষার্থী আল আমিন মোল্লাকে প্রাণনাশের চেষ্টা করেন এবং তাদের বাড়ীঘর ছেড়ে লুকিয়ে থাকতে বাধ্য করেন। এরপর জালাল মোল্লার সহযোগী জাহাঙ্গীর মোল্লা বাদী হয়ে জাজিরা থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন সেখানে আসামী করা হয় ভুক্তভোগী রাজা মোল্লা তার ভাই সাজা মোল্লা ও তার ছেলে ছুটিতে আসা প্রবাসী শিক্ষার্থী আল আমিন মোল্লাকে।
জালাল মোল্লার হাত থেকে রক্ষা পায়নি তার প্রতিবেশী অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য হাজী তোতা মোল্লা। তার জায়গা দখল করে জালাল তার বসতির জন্য গড়ে তুলছেন নতুন ভবণ। সেখানে বাঁধা দিতে যাওয়ায় তাকে দেশীয় অস্ত্র শাবল দিয়ে আঘাত করে আহত করেছেন।
বর্তমানে যুবলীগ নেতা জালাল মোল্লা জেল-হাজতে থাকায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন জালাল মোল্লার দ্বারা নিগৃহীত ভুক্তভোগী বাসিন্দারা।
অভিযোগের বিষয়ে জালাল মোল্লার স্বজনদের কাছে জানতে চাইলে তারা কোন কথা বলতে রাজি হননি।
পুলিশ বলছে, বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে জালাল মোল্লাকে গ্রেফতার করে হাজতে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ সর্বদা সজাগ রয়েছে।
ভুক্তভোগী অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য তোতা মোল্লা বলেন, ‘‘আমি সারাজীবন দেশের জন্য কাজ করেছি। এখন ছেলেমেয়েরা প্রতিষ্ঠিত হয়ে নিজেদের কাজ-কর্মের জন্য দুরে থাকে। বাড়ীতে আমি ও আমার স্ত্রী বসবাস করি। সেই সুযোগে জালাল তার লোকজন নিয়ে আমার জমি দখল করে বাড়ী নির্মাণ করছে। আমি নিষেধ করায় আমাকে শাবল দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে। আমি জালাল মোল্লার বিচার চাই।’’
আরেক ভুক্তভোগী সাউথ কোরিয়া প্রবাসী শিক্ষার্থী আল আমিন মোল্লা বলেন, ‘‘জালাল মোল্লার টার্গেট এলাকায় যেসব পরিবার আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয় সেসব পরিবার। তাদের বসতবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলসহ হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু করে। ওই ধারাবাহিকতায় আমি যখন থেকে স্কলারশিপ পেয়ে সাউথ কোরিয়া পড়াশোনা করতে যাই তখন থেকেই আমার পরিবারকে হয়রানি করা শুরু করে জালাল মোল্লা, জাহাঙ্গীর মোল্লা ও তাদের লোকজন। কিন্তু আমার বাবা তাদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েও তাদের অন্যায় আবদারে নতিস্বীকার করেনি।’’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এপর্যন্ত তিনবার ছুটিতে এসেছি। প্রতিবারই তারা আমাকে বিভিন্ন ঝামেলায় ফেলে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করেছেন। সর্বশেষ এবার ছুটিতে আসার পর আমার নামে চাঁদাবাজিসহ ২টি মিথ্যা মামলা করে আমাকে চরম হয়রানি করেছেন। আমি জালাল মোল্লার মত এসব লোকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাই। যেন ভবিষ্যতে এলাকার সাধারণ মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাই।’
এলাকায় সাংবাদিকদের উপস্থিতি জেনে জালাল মোল্লা ও তার সহযোগীদের দ্বারা নিগৃহীত হওয়া আরও একাধিক ভুক্তভোগী ভূমি দখল, চাঁদাবাজি, মারধর, হত্যার হুমকিসহ আরও বিভিন্ন অভিযোগ জানান।
এ বিষয়ে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোহাম্মদ মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘‘জৈনিক জালাল মোল্লা জাজিরা থানার আওতাধীন এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের মধ্যে মূল হোতা। তিনি নিষিদ্ধ সংগঠন আ.লীগের একটি পদে রয়েছেন। তাকে বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছি। এরপরও যদি কেউ কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি কিংবা সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার চেষ্টা করে তবে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।’’
তিনি আরও বলেন, ‘সমাজে চাঁদাবাজি, দালালী কিংবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের আমরা কঠোর হস্তে দমন করব।’