
সৌভিক পোদ্দার-ঝিনাইদহ :
দশভূজা দেবী দূর্গা, আর তাকে ঘিরেই পাশে দাড়িয়ে সরস্বতী, লক্ষী, কার্তিক গণেশ। আবার পাশেই প্রতিমার প্রতিকৃতিতে বোঝানো হচ্ছে অশূর বধের চেষ্টা। আসন্ন শারদীয় দূর্গা পূজা উপলক্ষে এভাবেই ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন মন্দিরে মন্দিরে চলছে প্রতিমা তৈরির শেষ মুহূর্তের কাজ।
চলতি মাসের ২৭ তারিখে বোধনের মধ্য দিয়ে দূর্গা পূজার সুচনা হবে এবং ২৮ তারিখে মহা ষষ্ঠির মধ্য দিয়ে শুরু হবে দূর্গা পূজার মুল আনুষ্ঠানিকতা। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর জেলায় ৪৫৫ টি মন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে পূজা। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসন, সীমান্তবর্তী মহেশপুর থানায় সনাতনী সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে নিরাপত্তা মুলক সভা। তবে প্রশাসনের সতর্কতা থাকলেও দেশের চলমান নানা সংকটময় মুহূর্তে মন্দিরগুলোতে অনেকেই বাড়তি নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন।
প্রতিমা তৈরির সাথে সংশ্লিষ্ট কারিগরররা বলছেন, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটেও গেল বছরের তুলনায় এবার দাম বেড়েছে প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত বাঁশ, বিচালী, পেরেক, সুতালী, মাটি, চট সহ অন্যান্য জিনিসের। সাধারনত একটি প্রতিমা তৈরিতে ২০ পিস বাঁশ, ৫শ’ আটি বিচালী, ১০ কেজি সুতলী, চার ভ্যান মাটি, পাটের আঁশ ৫ কেজি, চট ৩০ গজ, পেরেক ১০ কেজি সহ অন্যানী জিনিস দরকার হয়। তবে প্রতিমার নকশার উপর ভিত্তি করে উপকরণের পরিমাণ কম বেশী হয়ে থাকে।
এবার কারিগরদের প্রতি পিস বাঁশ ৩৫০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে যা গেল বছরের তুলনায় ৫০ টাকা বেশী, সুতালী প্রতি কেজি ২০০ টাকা, যা গত বছর ছিল ১৬০ টাকা, প্রতি ভ্যান মাটি এক হাজার টাকা, প্রতি গজ চট ৮০ টাকা যা গত বছর ছিল ৬৫ টাকা, পাটের আঁশ প্রতি কেজি ২০০ টাকা যা গত বছরের তুলনায় ৫০ টাকা বেশী। এছাড়া প্রতিমার রং করতে খরচ হয় গড়ে ১০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে শহরাঞ্চলে এক একটি প্রতিমা তৈরিতে খরচ হয় প্রায় এক লক্ষ টাকা। তবে গ্রামাঞ্চলের প্রতিমা তৈরি খরচের পরিমাণ থাকে কম।
প্রতিমা’র প্রথম পর্যায়ে কাঠামো তৈরি ও প্রথম মাটির কাজ করতে সময় লাগে ৮ দিন। এরপর ১০ দিন বিরতি শেষে দো-মাটির কাজ করা হয়, যেখানে প্রায় চার দিন লেগে যায়। আবারও পাঁচ দিন বিরতি শেষে রংয়ের কাজ করা হয় যেখানে তিন দিন সময় লেগে যায়।
প্রতিমা কারিগর অরবিন্দু পাল বলেন, উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে লভ্যাংস কমলেও সাজসজ্জায় বৈচিত্র আনা হয়েছে। চন্ডিমতে ধর্ম ভিত্তিক ভাবে যেন পূজাটা হয় সেভাবেই প্রতিমার কাজ করা হচ্ছে। গাছ, ফুলগাছ, পিছনে গ্রাফিক্স, মা দুর্গা অশূর নিধন করছে এমন নানা ডিজাইন থাকছে প্রতিমা তৈরিতে।
কেন্দ্রীয় বারোয়ারী পূজা মন্দিরের সাধারন সম্পাদক সাধন সরকার বলেন, পূজার প্রস্তুতি সুন্দর ভাবেই এগিয়ে চলেছে। প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রাখছি, তারাও খোজ নিচ্ছে। পূজায় দূর্গা মা’র কাছে আমাদের প্রার্থনা সারা দেশে যেন মানুষ সুন্দর ভাবে বসবাস করতে পারে, কোন হিংস্রতা না থাকে। সবার মধ্যে যেন মা সুসম্পর্কের বলয় তৈরি করেন।
চাকলাপাড়া নবগঙ্গা দুর্গা মন্দিরের সাধারন সম্পাদক উজ্জল সরকার বলেন, পরিবর্তিত প্রেক্ষপট, বর্তমান পরিস্থিতিতে মন্দিরগুলোতে যেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। যেন কোন অপ্রিতীকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়।
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ও পূজা ঘিরে জেলা প্রশাসনের গঠিত নিরাপত্তা কমিটির প্রধান রথীন্দ্র নাথ রায় বলেন, অপ্রিতীকর পরিস্থিতি এড়াতে এরই মধ্যে নিরাপত্তামুলক সভা হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় বিজিবি’র টহল, অন্যান্য স্থানে পুলিশের টহল বৃদ্ধির জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাথে জেলা প্রশাসনের সার্বক্ষনিক মনিটরিং সেল কাজ করছে নিরাপত্তা নিশ্চিতে।