
সুমন খান :
বাংলাদেশের সড়ক যেন প্রতিদিনই কেড়ে নিচ্ছে অগণিত প্রাণ। একেকটি দুর্ঘটনায় একেকটি পরিবার অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। প্রিয়জন হারিয়ে চোখের জলে ভাসছে অসংখ্য মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান। এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
গত রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) ইং রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঢাকা মেট্রো সার্কেল-২ ও ঢাকা জেলা সার্কেলের আওতাধীন দুর্ঘটনায় নিহত ৮ পরিবার ও আহত এক ব্যক্তির হাতে ক্ষতিপূরণের চেক হস্তান্তর করা হয়। নিহত প্রতিটি পরিবারের জন্য ৫ লাখ টাকা এবং আহত একজনকে ১ লাখ টাকা দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে মোট ৪১ লাখ টাকার চেক প্রদান করে সংস্থাটি।
চেক বিতরণ করেন ঢাকা মেট্রো-২ সার্কেলের উপপরিচালক (ইঞ্জি.) মো. সানাউল হক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিআরটিএ ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক(ইঞ্জি.)মো:আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) মো. বখতিয়ার উদ্দিন, মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা কামরুল হাসানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।মানবিক দায়িত্বের বার্তা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়া কেবল আইনি বাধ্যবাধকতা নয়, এটি একটি মানবিক দায়িত্বও বটে। প্রিয়জন হারানোর বেদনা কোনোদিন মুছে যাবে না, তবে এই সহায়তা হয়তো তাদের নতুন করে বেঁচে থাকার শক্তি জোগাবে।বিআরটিএ কর্মকর্তারা জানান, নিহত বা গুরুতর আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য একটি বিশেষ ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে নিয়মিতভাবে ক্ষতিপূরণের টাকা বিতরণ করা হচ্ছে।ক্ষতিপূরণের এই অর্থ নিঃসন্দেহে সহায়তা হলেও বাস্তব প্রশ্ন রয়ে যায়,কেন প্রতিদিন গড়ে ১৫–২০ জন মানুষ সড়কে প্রাণ হারাচ্ছেন?ফিটনেসবিহীন যানবাহন ওপ্রশিক্ষণহীন চালকরা কীভাবে এখনো রাস্তায় চলছে?সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কেন কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শক্তিশালী আইন প্রয়োগ, সড়ক ব্যবস্থাপনা সংস্কার, যানবাহনের ফিটনেস নিশ্চয়তা ও চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়া এ পরিস্থিতি বদলানো সম্ভব নয়। শুধু ক্ষতিপূরণ প্রদানে দায় শেষ করলে দুর্ঘটনার প্রবণতা কমবে না।
নিহত স্বজনের আর্তনাদ, চেক গ্রহণ শেষে এক নিহত চালকের স্ত্রী কান্নাজড়ানো কণ্ঠে বলেন,আমার স্বামীকে তো আর টাকা দিয়ে ফেরানো যাবে না। আমরা চাই সড়কে যেন আর কোনো পরিবার এভাবে প্রিয়জনকে না হারায়। বিআরটিএ’র ক্ষতিপূরণ বিতরণ মানবিক উদ্যোগ হলেও সড়কের রক্তক্ষরণ থামাতে এর চেয়ে বড় প্রয়োজন প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ। না হলে প্রতিদিনই নতুন পরিবারকে অশ্রুসিক্ত হতে হবে আর দেশের সড়ক পরিণত হবে মৃত্যুফাঁদে।