
নীলফামারী প্রতিনিধি :
নীলফামারী উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) শ্রমিকদের সাথে যৌথ বাহিনীর সংঘর্ষে হাবিব নামে এক শ্রমিক নিহত এবং ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
মঙ্গলবার (২/সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে শ্রমিকদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পুরো এলাকা এখন রনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। নিহত শ্রমিক হাবিব ইসলাম (২০) ইপিজেডের ইকো কোম্পানির শ্রমিক ছিলেন। তিনি সদর উপজেলার সংগলশী ইউনিয়নের কাজিরহাট এলাকার দুলাল হোসেনের ছেলে।
এছাড়াও নীলফামারীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য কয়েক জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তির বিষষটি নিশ্চিত করে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফরহান তানভিরুল ইসলাম বলেন, নিহত শ্রমিককে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।
শ্রমিকের দাবিগুলো হলো, উৎপাদন টার্গেট কমানো, ওভারটাইম নিশ্চিত করা, ছুটি যথাযথভাবে দেওয়া, বেতন ও ভাতা সময়মতো পরিশোধ, আবাসন ও প্রমোশনের জটিলতা নিরসন, সকাল ৭টার আগে ডিউটি না রাখা, গর্ভবতী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ সুবিধা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ করা এবং ক্ষুদ্র সমস্যাকে কেন্দ্র করে চাকরিচ্যুত না করা।
জানা যায়, উত্তরা ইপিজেডে অবস্থিত এভারগ্রীন প্রোডাক্টস ফ্যাক্টরি (বিডি) লিমিটেডের শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবী নিয়ে টানা চার দিন ধরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছিলো। ওই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গতকাল সোমবার রাতে কারখানা কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করে। তবে কারখানা বন্ধের পরও আন্দোলন থামেনি। আজ সকালে শ্রমিকরা ইপিজেডের মুলফটকে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছিলেন। এরই মধ্যে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটনা ঘটে শ্রমিকদের। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে অপরদিক থেকে শ্রমিকরা ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় গুলি করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এতে শ্রমিক নিহত হলে শ্রমিকদের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক বলেন, আমরা টানা চার দিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলক করছি। আমাদের দাবী কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের সাথে কোনো আলোচনা না করে উল্টো কারখানা বন্ধ করে। তাই আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।
গুলিবিদ্ধ শ্রমিক সামিম ইসলাম বলেন, আন্দোলন করছিলো এ্যাভারগ্রীন কোম্পানীর শ্রমিকরা। আমি ম্যাজেন কোম্পানীতে কাজ করি। কোম্পানীতে যাওয়ার সময় মুলগেইটে সেনাবাহিনী আমাকে আটকে দেয়। পরে গেইটের সামনে দাড়িয়ে থাকি। তার কিছুক্ষণ পরে একটা গুলি এসে আমার পায়ে লাগে। আমি সাথে সাথে মাটিতে পড়ে যাই।
এ বিষয়ে জানতে নীলফামারী সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম আর সাইদেকে মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।