
ইনছান আলী :
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় গড়াই নদী থেকে জেলের জালে ধরা পড়েছে ডলফিন প্রজাতির একটি শুশুক। মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকালে উপজেলার কাশিনাথপুর-মাজদিয়া এলাকার গড়াই নদীর অংশ থেকে বিপুল বিশ্বাস নামের এক জেলের জালে ডলফিন প্রজাতির শুশুকটি ধরা পড়ে। যার আনুমানিক ওজন প্রায় ১০ কেজি।
সুবিদ্দাহ গোবিন্দপুর গ্রামের বিমল বিশ্বাসের ছেলে জেলে বিপুল বিশ্বাস জানান, তিনি প্রতিদিনের মতো গড়াই নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরছিলেন। সেই জালে আটকা পড়ে শুশুকটি। জাল থেকে তোলার কিছুক্ষণ পরই শুশুকটি মারা যায়।
ডলফিন বা শুশুক নদী ও সমুদ্রের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে এক অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। ডলফিন আমাদের পরিবেশের এক গুরুত্বপূর্ণ সূচক। জলজ বাস্তুসংস্থানের স্বাস্থ্য ও স্থিতিশীলতা নির্ভর করে এ প্রজাতির ওপর।
বিশেষ করে মিঠা পানির ডলফিন জলজ প্রাণীদের খাদ্যশৃঙ্খল সুরক্ষিত রাখে। জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণ যখন আমাদের নদী, হ্রদ ও সাগরকে বিপর্যস্ত করে তুলছে, তখন ডলফিন এক ধরনের প্রাকৃতিক ‘সতর্ক বার্তা’ দেয়। তারা শিকারি হিসেবে দুর্বল ও অসুস্থ মাছ খায়, যা পানির জীববৈচিত্রকে স্বাস্থ্যকর রাখে।
ডলফিনের সংরক্ষণ সামুদ্রিক জীবনের অন্যান্য প্রজাতির জন্যও উপকারী, কারণ তাদের অনুপস্থিতি বা সংখ্যার হ্রাস সামুদ্রিক পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে। যদিও বর্ষা মৌসুম ব্যতিরেকে শুষ্ক মৌসুমে এদের আবাসস্থল কমে বেশ সংকুচিত হয়ে যায়।
এ নদীর ডলফিন সংরক্ষণে বিশ্বের ডলফিন রেঞ্জ দেশগুলোর অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশের পদক্ষেপ কিন্তু অনেকটাই অগ্রগামী। আশার কথা হলো, আমাদের ডলফিনের আবাসের জন্য বিস্তীর্ণ জলরাশি রয়েছে। আমাদের প্রমত্তা পদ্মা, যমুনা, মেঘনাসহ, ব্রহ্মপুত্র, হালদা, বলেশ্বর, গড়াই-মধুমতী, ডাকাতিয়া প্রভৃতি নদীই রিভার ডলফিনের উপযুক্ত আবাসস্থল। বেশ কয়েক বছর ধরেই আমরা দেখছি ডলফিন ও নদী বাঁচাতে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে নানা কার্যক্রম গ্রহণের অভাব রয়েছে।
গড়াই নদীর ডলফিনসহ অন্যান্য প্রজাতির জীববৈচিত্র বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো নদীর দূষণ, অপ্রয়োজনীয় মাছ ধরার জাল, জলবিদ্যুৎ বাঁধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদীর প্রবাহে পরিবর্তন।
এদের সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে, যা আমাদের বাস্তুসংস্থানকে ঝুঁকিতে ফেলছে। ডলফিন সংরক্ষণ কেবল একটি প্রজাতি সংরক্ষণ নয় বরং আমাদের পরিবেশের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
যখন ডলফিনকে রক্ষা করা হয়, তখন তা জলজ পরিবেশের অন্যান্য প্রাণীদের জন্যও উপকার বয়ে আনে।
কয়েক মাস পূর্বে এ নদীতে কুমিরের বিচরণ দেখা গেলে প্রশাসনিক দায়িত্বহীনতা ও সচেতনতার অভাবে এবং উৎপাতে কুমির এলাকাবাসীর হাতে আটকা পড়ে।
প্রয়োজন হচ্ছে শুশুক-ডলফিন দেখা পাওয়া স্থানকে বিশেষ সংরক্ষিত অঞ্চল ঘোষণা, অভয়াশ্রম ও নিরাপদ আবাস নিশ্চিত করতে সামাজিক ক্যাম্পেইন একইসাথে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে পরিবেশ সূচক হিসাবে প্রাণ-পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র সুরক্ষা নিশ্চিতের বিকল্প নেই।
নদীর প্রাণ ডলফিন-শুশুক নিরাপদে বেঁচে থাকার জন্য অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার গুরুত্বারোপ করেছেন এলাকার বিজ্ঞজন ও সুধীমহল।