
মনিরুজ্জামান মনির-মৌলভীবাজার :
প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ১৫ বছরের স্কুলছাত্রীকে হত্যার অভিযোগে জুনেল মিয়ার ফাঁসির দাবিতে আদালত পর্যন্ত মিছিল, সরকারি পিপি-র ঘোষণা: “আইন হাতে নেওয়া যাবে না, আমরা বিচার নিশ্চিত করব”
মৌলভীবাজার, ২৩ জুন
১. উত্তাল মানববন্ধন ও রাস্তা অবরোধ: নাফিছা জান্নাত আনজুম (১৫) হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার ক্ষোভে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সামনে কয়েক হাজার মানুষ রাস্তা অবরোধ করে ফুঁসে উঠেছেন। “জুনেলের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে!”, “জুনেলের ফাঁসি চাই, দিতে হবে দিতে হবে!” – এমন স্লোগানে প্রকম্পিত হয়েছে শহর। প্রতিবাদকারীরা পরে মিছিল নিয়ে মৌলভীবাজার আদালত চত্বর অবরোধ করেন, যেখানে পুলিশ ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থরা হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হন ।
২. হত্যাকাণ্ডের নৃশংস পটভূমি:
প্রতিবেশী জুনেল মিয়া (৩৯) আনজুমকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হলে গত ১২ জুন তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ঘাতক তার লাশ কুলাউড়া উপজেলার কিরিম শাহ মাজারের নিকট ঝোপে ফেলে দেয় এবং নিহতার বোরকা, স্কুলব্যাগ ও জুতা লুকিয়ে ফেলে। পুলিশ জুনেলের মোবাইল থেকে পর্ন সাইট ব্রাউজিংয়ের রেকর্ড ও স্থানীয়দের সাক্ষ্যপ্রমাণে তাকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি রাত ১২টায় হত্যার কথা স্বীকার করেন ।
৩. সরকারি পিপি’র হস্তক্ষেপ ও আশ্বাস:
অবরোধের মুখে সরকারি পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) ব্যক্তিগতভাবে দায়িত্ব নিয়ে জনতার সামনে হাজির হন। তার জোরালো বক্তব্য: “আনজুম হত্যাকারীর ফাঁসির রায় কার্যকর করতে আমরা সহযোগিতা করবো, ইনশাআল্লাহ। আপনারা আইন হাতে তুলে নেবেন না – বিচার প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস রাখুন!” এই ঘোষণার পরেই আন্দোলনকারীরা অবরোধ তুলে নেন ।
৪. শোক ও ক্রোধের প্রতীক:
মানববন্ধনে আনজুমের শোকার্ত পিতার নীরব উপস্থিতি এবং স্কুলছাত্রীদের হাতে কালো ব্যাজ ও ফাঁসির দাবি লেখা প্ল্যাকার্ড সামাজিক আন্দোলনের নতুন চিত্র তুলে ধরে। এক কিশোরীর ভাষ্যে: “আমরা জানি, জুনেলের ফাঁসি না হলে আরও আনজুম মরবে!”
৫. প্রশাসনের ভূমিকা: জেলা পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে ৬টি বিশেষ টিম গঠন করে তদন্তের মাধ্যমে এই মামলার রহস্য উন্মোচন করা হয়। তবে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভে সামিল হয় ।
বিশেষ উক্তি: “এই হত্যাকাণ্ড শুধু একটি প্রাণ নেয়নি, মৌলভীবাজারের মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতাও প্রকাশ করেছে। জুনেলের ফাঁসি নারী-শিশু অধিকারের লড়াইয়ে মাইলফলক হবে।” স্থানীয় নারী নেত্রী
পরিসংখ্যান ও তথ্য: ঘটনার সময়রেখা বিবরণ :
* ১২ জুন : আনজুমকে প্রাইভেট পড়া ফেরার পথে জুনেল শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
* ১৬ জুন : পুলিশ প্রেস ব্রিফিংয়ে জুনেলের স্বীকারোক্তি ও আলামত উদ্ধারের কথা প্রকাশ করে।
* ২৩ জুন : ফাঁসির দাবিতে আদালত অবরোধ ও পিপি’র হস্তক্ষেপ
আনজুম হত্যা মামলা এখন শুধু একটি অপরাধ নয়, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধের প্রতীকী সংগ্রামে পরিণত হয়েছে। সরকারি পিপি’র প্রতিশ্রুতি স্থানীয়দের আশা জাগালেও, বিচারের রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত মৌলভীবাজারের মানুষ সোচ্চার থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। “ফাঁসি চাই, ক্ষমা নয়!” – এই দাবি এখন গোটা দেশের বিবেককে নাড়া দিচ্ছে।
জুনেল মিয়ার বিচার দ্রুততম সময়ে শেষ করার জন্য হাইকোর্টে চাপ বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন।