
আকতারুজ্জামান-তানোর, রাজশাহী :
রাজশাহীর তানোর উপজেলায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের সেবার মান নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি ভেটেরিনারি সার্জনরা মাঠে না গিয়ে অফিসেই বসে পরামর্শ দেন, আর মাঠপর্যায়ে নিয়োজিত কর্মীরা সময়মতো গরু-ছাগলকে টিকা দেন না। শুধু তাই নয়, এলএমএফ (লাইসেন্সড মেডিকেল ফার্মাসিস্ট) ডিগ্রিধারী অনেক সাধারণ পশু চিকিৎসক নিয়মিত অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা বাবদ। মাঠে অনুপস্থিত থাকেন ডাক্তাররা, সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন খামারিরা।
স্থানীয় কৃষক ও খামারিরা জানিয়েছেন, প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে মাঠপর্যায়ে তেমন কোনো সেবা পাওয়া যায় না। ডাক্তারদের ফোন করলে তারা বলেন, “অফিসে নিয়ে আসেন,” কিন্তু গ্রামের অনেক পশুপালকের পক্ষে অসুস্থ পশুকে অফিসে আনা সম্ভব হয় না।
স্থানীয় খামারি ফুলচান বলেন “পশু অসুস্থ হলে চিকিৎসকরা আসতে চান না। ফোন দিলে শুধু ওষুধের নাম লিখে দেন এবং স্থানীয় ডাক্তার দিয়ে পুশ করে নিতে বলেন । এটাই যদি সেবা হয়, তাহলে আমরা গরু ছাগল বাঁচাব কীভাবে?” সরকারি কর্মীদের দিয়ে গরু ও ছাগলের টিকাদান কার্যক্রম বাস্তবায়নের কথা থাকলেও সেখানেও দেখা গেছে অব্যবস্থা। অনেক সময় তারা সময়মতো যান না, আবার গেলেও খামারিদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এলএমএফ ডিগ্রিধারী কিছু ব্যক্তি যাদের কোনো উচ্চতর ভেটেরিনারি ডিগ্রি নেই, তারাও নিজেদের “ডাক্তার” পরিচয় দিয়ে গ্রামের পশুপালকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন। ভিজিটের নাম করে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করেন তারা। অথচ এলএমএফ কোর্স মূলত পশু চিকিৎসা সহকারীর প্রশিক্ষণমাত্র।
তানোরের এক গরু পালনকারী বলেন, “একজন এলএমএফ শুধু টিকাদানে সহযোগিতা করার কথা, কিন্তু এখন তো পুরো চিকিৎসা দিয়ে টাকা নিচ্ছে। সরকারি ডাক্তাররাও এই অনিয়ম দেখে না।”
তানোর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ওয়াজেদ মিয়া বলেন , “আমাদের জনবল সীমিত, তবে আমরা চেষ্টা করি সেবা দিতে। অভিযোগ থাকলে অফিসে জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে স্থানীয়দের দাবি, শুধু অফিসে বসে অভিযোগ শুনলেই হবে না, মাঠপর্যায়ে কঠোর মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে।
তানোরের সচেতন নাগরিক ও খামারিরা বলছেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগে দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে হবে। মাঠে সেবার নিশ্চয়তা, অননুমোদিত চিকিৎসা বাণিজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং টিকা কার্যক্রমের সময়মতো বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন তারা।