
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
বাংলাদেশের দুই সেক্টরের দুই নক্ষত্র আব্দুল্লাহ হিল রাকিব (পাপ্পু) ও সাইফুজ্জামান (গুড্ডু) ছিলেন বন্ধু। ঈদের ছুটিতে সপরিবারে কানাডায় বেড়াতে গিয়েছিলেন।
গতকাল (৮ই জুন, রোববার), অন্টারিওর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর লিনজির একটি কটেজসংলগ্ন হ্রদে ক্যানোইং করতে গিয়ে বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৮৭-এর অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান গুড্ডু ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিজিএমইএ-এর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহিল রাকিব পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন।
স্টার্জন লেকে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের একটা জনপ্রিয় একটিভিটি হচ্ছে কেনু নামের একটা লম্বাটে নৌকায় চড়ে বোটিং করা। পাপ্পু ও গুড্ডু দুই বন্ধু ও পাপ্পুর ছেলে তিনজন মিলে একটি কেনুতে চড়েছিলেন। দুর্ঘটনাবশত কেনুটি উল্টে গেলে,পাপ্পুর ছেলে সাঁতরে তীরে আসতে পারলেও কেনুতে পা আটকা থাকায়,সাঁতার জানা সত্ত্বেও, দম আটকে পাপ্পু গুড্ডু দুই বন্ধুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। বোটটি উল্টে যায় পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ১০/১৫ ফিট দুরে পরিবারের সামনেই।
কেনু বোট এ যেহেতু কোমর পর্যন্ত পা ভেতরে ঢুকানো থাকে আর উল্টে গেলে এর থেকে তাৎক্ষনিক বের হবার টেকনিক আলাদা তাই হয়তো বুঝে উঠতে পারেনি দুজনেই।
একটি নির্মল ভ্রমণ পরিণত হলো এক মর্মান্তিক অধ্যায়ে—যার পরিসমাপ্তি ঘটল কানাডার লিনজির (Lindsay, Ontario) শান্ত হ্রদের গভীরে।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাবেক চৌকশ পাইলট সাইফুজ্জামান গুড্ডু বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৮৭ এর ক্যাপ্টেন ছিলেন।
দুজনেই ভাল সাঁতার জানতো তবুও চলে গেল না ফেরার দেশে।
বাংলাদেশ বিমান তথা বাংলাদেশ হারালো এক চৌকস পাইলট।
গুড্ডু তাদের কোর্সের বেষ্ট পাইলট ছিলো বলে সহপাঠীরা জানিয়েছে।
জানা যায়, সাইফুজ্জামান গুড্ডু তাঁর স্ত্রী ও ছোট মেয়েকে নিয়ে গতকালই ঢাকা থেকে টরন্টো আসেন। উদ্দেশ্য ছিল বড় মেয়ের সঙ্গে দেখা এবং পারিবারিক অবকাশযাপন। বড় মেয়ে টরন্টোর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। আজ তাঁরা টরন্টো থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরের লিনজি শহরে রওয়ানা হন এবং ওখানকার একটি কটেজে ওঠেন। দুপুরের দিকে (বেলা ২টায়) সাইফুজ্জামান তাঁর এক বন্ধু ও বন্ধুর ছেলেসহ একটি ক্যানো নিয়ে হ্রদে নামেন।
ক্যানোটি যখন শান্ত হ্রদের বুকে এগিয়ে চলছিল, তখন তীরে দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর স্ত্রী ও ছোট মেয়ে মোবাইলে ভিডিও করছিলেন। হঠাৎ করে ক্যানো উল্টে যায়। বন্ধুর ছেলে সাঁতরে পাড়ে উঠে আসেন, কিন্তু সাইফুজ্জামান ও তাঁর বন্ধু আর ফিরে আসেননি। পরে উদ্ধারকারীরা তাঁদের দু’জনকেই উদ্ধার করে, কিন্তু তখন তাঁরা আর জীবিত ছিলেন না।
মিসিসগায় বসবাসরত তাঁর কাজিন ফাহমিদা টনি জানান, সাইফুজ্জামান ছিলেন অত্যন্ত অভিজ্ঞ ও চৌকষ এক পাইলট। তাঁর পিতা ছিলেন বাংলাদেশ এয়ার ফোর্সের কর্মকর্তা। বিমানবাহিনীর ঐতিহ্যবাহী পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা গুড্ডু ছোটবেলা থেকেই ছিলেন শৃঙ্খলাপরায়ণ, দায়িত্বশীল ও আত্মবিশ্বাসী।
লিনজি অন্টারিওর একটি শান্তিপূর্ণ পর্যটন নগরী, যেখানে বোটিং, কায়াকিং, ক্যানোইং-এর মতো জলক্রীড়া জনপ্রিয়। তবে এমন দুর্ঘটনা সেখানে সচরাচর ঘটে না। হঠাৎ করে দিকভ্রান্ত বাতাস, লাইফ জ্যাকেটের অনুপস্থিতি, কিংবা ক্যানো চালনায় অপ্রশিক্ষিততা—এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণ হতে পারে বলে জানা গেছে।
অন্টারিও প্রাদেশিক পুলিশ (Ontario Provincial Police – OPP) জানিয়েছে, রোববার বিকেলে কাওয়ার্থা লেইকস অঞ্চলের একটি হ্রদে ক্যানো উল্টে যাওয়ার ঘটনায় দুই ব্যক্তি মারা গেছেন।
পুলিশ জানায়, বিকেল ৩টার কিছু পরে স্টার্জন লেক (Sturgeon Lake)-এ একটি বোট দুর্ঘটনার খবর পেয়ে জরুরি সেবাদানকারীরা সেখানে ছুটে যান।
ক্যানোটিতে তিনজন পুরুষ ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন। কিন্তু বাকি দুজন পানিতে ভেসে থাকতে না পেরে প্রাণ হারান।
নৌকায় থাকা তিনজনের কারো শরীরে তখন কোনো লাইফ-জ্যাকেট ছিল না বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এই অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনায় গভীরভাবে শোক প্রকাশ করছি এবং তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।