
এম এ গাফফার :
সুপ্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন সাংবাদিক বন্ধুগণ,২৮ মে,২০২৫ ইং বুধবার, অবৈধ অর্থ উদ্ধার ও গণমুখী বিনিয়োগ জাতীয় সংস্থা” গঠনে আইন প্রণয়ন ও অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’র সংগঠক, নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার অভিযুক্তদের জামিনের ব্যবস্থা গ্রহনের দাবীতে-অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র্র এবং আইন উপদেষ্টা বরাবরে “স্মারকলিপি” প্রদান উপলক্ষে অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
বন্ধুগন, ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ সংবিধানের ৭(১) আওতায় সিভিল রাইটস্ (নাগরিক অধিকার) আদায়ের সংগঠন। আপনারা জানেন স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকেই সর্বস্তরে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি অমিত সম্ভাবনার বাংলাদেশকে কুরে কুরে খাচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকেই, ভ্যাট, ট্যাক্স, চার্জ, ফি, ডিউটি, ইত্যাদি খাতে বাংলাদেশের জনগণ থেকে আদায় করা অর্থ, একটি দুর্নীতিবাজ লুটেরাগোষ্ঠী আত্মস্বাত করছে এবং আত্মস্বাতকৃত অর্থের একটি বড় অংশ বিভিন্ন দেশে পাচার করছে ও দেশের মাঝে পুঞ্জিভুত রাখছে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দুর্বৃত্তদের ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট, দুর্র্বৃৃত্তায়নের অপরাজনৈতিক, সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা বিদ্যমান থাকায় রাষ্ট্রের মালিক জনগণের কাঙ্খিত অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্য অর্জনে ‘দুর্নীতিকেই’ প্রধান বাঁধা হিসেবে গণ্য করছে সকল শ্রেণিপেশার নাগরিক সাধারণেরা। রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার প্রধান সমস্যা “দুর্নীতি”, এ বিবেচনা থেকেই “অহিংস গণঅভ্যূত্থান বাংলাদেশ” সিভিল রাইটস (নাগরিক অধিকার) সংগঠন অহিংস নীতিতে শান্তিপূর্র্ণ সাংবিধানিক পন্থায় ‘দুর্নীতি বিরোধী একটি বিশেষ আইন’ প্রণয়ন, আইনটি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করানোর লক্ষ্য ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে ২০২১ সাল থেকে সারাদেশের তৃণমূল পর্যায়ের নানা বৈষম্যের শিকার, শোষিত, বঞ্চিত, নিপিড়ীত জনগোষ্ঠিকে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে আত্মস্বচেতন ও উদ্বুদ্ধ করণ এবং আইনের প্রস্তাবের প্রতি সমর্থনকারীদের অনুস্বাক্ষর সংগ্রহ করার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে, দেশের ১৮ কোটি মানুষের মাঝ থেকে শতকরা দশ ভাগ অর্থাৎ এক কোটি আশি লাখ মানুষের আইনের প্রস্তাবের প্রতি সমর্থনকারীদের অনুস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে দুর্নীতি বিরোধী বিশেষ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে স্বাধীন জাতীয় সংস্থা গঠন, গঠিতব্য জাতীয় সংস্থার মাধ্যমে, বিদেশে পাচারকৃত এবং দেশের মাঝে পুঞ্জিভুত থাকা অবৈধ অর্থ উদ্ধার করে রাষ্ট্রের মালিক জনগণের অর্থ তাদেরকে পুঁজি হিসেবে ফেরত প্রদানে তৃণমূল পর্যায়ের গণমানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির এই স্বপ্ন যিনি দেখিয়েছিলেন তিনি হলেন, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আইনজীবি এড. আ ব ম মোস্তাফা আমীন।
বাংলাদেশের সংবিধানের ২০ (২) অনুচ্ছেদে কোন ব্যক্তিকে অনুপার্জিত অর্থ ভোগ করতে না দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে এবং ১৪ অনুচ্ছেদে মেহনতি মানুষ তথা কৃষক ও শ্রমিকসহ অনঅগ্রসর অংশকে সকল প্রকার শোষণ থেকে মুক্ত করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, বিগত ৫৩ বছর ধরে শাসকগোষ্ঠি সাংবিধানিক অঙ্গীকার ভঙ্গ করে জনগণ থেকে আদায় করা অর্থ তৃণমূলে জনগণের সার্বিক কল্যাণে ব্যবহৃত না করে লুটপাট ও বিদেশে পাচার ও দেশের মাঝে পুঞ্জিভুত করায় জনগণ পুঁজিশূণ্য হয়ে অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ে উন্নত জীবন যাপনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। খাদ্যপণ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি জাতীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সামাজিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও সমাজে ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। একদিকে দেশের শাসন ব্যবস্থায় দুর্নীতিকে জিরো টলারেন্স ঘোষণা অপরদিকে দশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদুক) এর নিস্ক্রিয় ভূমিকায় জনগণের কষ্টার্জীত রক্তঘামে তৈরী অর্থ লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশের বিভিন্ন দেশে পাচার হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদুক) এর অকার্যকর কর্মধারা দেশবাসীকে হতবাক করেছে।
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,-অহিংস গণঅভ্যুতাথান বাংলাদেশ যখন প্রস্তাবিত আইনের রূপ রেখা তৈরীসহ আইন প্রণয়নের যৌক্তিকতা বিষয়ে জনগণকে আত্মস্বচেতন উদ্বুদ্ধ করণের শেষ পর্যায়ে ঠিক সে সময়ে ঘটে যায় ২০২৪ ইং সালে জুলাই আগষ্টের ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থান। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও পলায়ন, ৮ আগষ্ট, ২০২৪ ইং প্রফেসর ড. মোঃ ইউনুস সাহেবকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন পরবর্তী সরকারের দুর্নীতি বিরোধী বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণার পর গত ১৮ আগষ্ট, ২০২৪ ইং “অবৈধ অর্থ উদ্ধার ও গণমুখী বিনিয়োগ জাতীয় সংস্থা” শিরোনামে প্রস্তাবিত দুর্নীতি বিরোধী বিশেষ আইনের রূপরেখা অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে প্রণয়নের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মোঃ ইউনুস সাহেবের বরাবরে জমা দেয়া হয়। সে সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে আইনের প্রতি ব্যাপক গণমানুষের সমর্থন নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। সে মতে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করি। এবং পরবর্তীতে গত ২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ইং তারিখে আইনের প্রতি ব্যাপক গণমানুষের সমর্থন প্রদর্শন করার লক্ষ্যে ঢাকার শাহবাগে সমাবেশ আহ্বান করা হয়। ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয়। এছারা বেশ কিছুদিন আগেই সমাবেশটি আহ্বান করা হয়েছিল।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও এটাই সত্য এই যে, আহুত সমাবেশে গ্রামের সাধারণ শ্রমজীবি নারীপুরুষ উপস্থিত হলে তাদের উপর হামলা মারপিট করে সমাবেশ পন্ড করে দেয়া হয়। এরপর সংগঠনের নেতাকর্মিদের ওপর মিথ্যা ও হয়রানিমূলক ১৮ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিগত সরকারের সময় দায়ের করা হয়েছিল ৩টি মামলা। মামলায় সংগঠক নেতা কর্মীসহ শতাধিক নিরীহ নারীপুরুষকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এদের অনেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন, অনেকে জেল হাজতে রয়েছেন, অনেকে পালিয়ে ফিরছেন।
২৫শে নভেম্বর সমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন থানায় অহিংস পরিবারের বিভিন্ন সংগঠক ও অনুস্বাক্ষরকারীদের নামে ঢালাওভাবে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত হিসাব মতে ১৮ মামলায় অভিযুক্ত করা হয় ১৪৬ জনকে, অজ্ঞাত ২৫০০-৩০০০। তন্মধ্যে ৩৬ জনই নারী ও গ্রামের সহজ সরল মানুষ। আনুমানিক ১০০ এর অধিক গ্রেফতার ও কারাবাসের শিকার হয়। এদের মধ্যে রয়েছে আড়াই বছরের মেয়ে শিশু মারিয়ামকে নিয়ে এক মা দেলোয়ারা কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি প্রিসনে (৩মাস), শারীরিক প্রতিবন্ধী পঞ্চাশোর্ধ মহিলা ও তার স্বামী (৩মাস), মানসিক প্রতিবন্ধী অটিস্টিক পুরুষ (কারাবাস চলমান); গ্রামের খেটে খাওয়া মজুর, গাছি, মাংস বিক্রেতা, অটোচালক, ফল বিক্রেতা, মাদ্রাসার হুজুর, প্রান্তিক উদ্যোক্তা, ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী- সকলেই ১-৩ মাস কারাবাস যাপন করেন। গ্রামের নিরীহ পুরুষ মহিলারাও ৩০ হাজার থেকে ১.৫ লাখ টাকা পর্যন্ত উকিলদের প্যাকেজ বাণিজ্যে জামিন নিয়েছে। অনেকে উকিল নিয়োগ করতে না পাড়ার এখনো কারাগারে।
এক্ষণে সরকার দুর্নীতি বিরোধী বিশেষ আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহন করেছেন বলে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত খবরে আমরা জানতে পেরেছি। “অবৈধ অর্থ উদ্ধার ও গণমুখী বিনিয়োগ জাতীয় সংস্থা” নামক প্রস্তাবিত আইনের বিশেষত্ব ছিল, আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সরকার একটি স্বাধীন জাতীয় সংস্থা গঠন করবে। আইনের দ্বারা গঠিতব্য জাতীয় সংস্থা বিদেশে পাচারকৃত ও দেশের মাঝে পুঞ্জিভুত অবৈধ অর্থ উদ্ধার করে রাষ্ট্রের মালিক পুঁজিহীন তৃণমূল পর্যায়ের কৃষক, শ্রমিক হকার বেকারসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মাঝে বিনা সুদে, বিনা জামানতে, সহজ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য ঋণ হিসেবে পুঁজি প্রদান করবে। সরকার দুর্নীতি বিরোধী যে আইনটি প্রণয়ন করতে যাচ্ছেন, সে আইনটি যেন শোষিত বঞ্চিত নিপিড়ীত মানুষের স্বার্থ রক্ষা করে সেটাই কাম্য।
সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা, “অবৈধ অর্থ উদ্ধার ও গণমুখী বিনিয়োগ জাতীয় সংস্থা” গঠনে আইন প্রণয়ন ও অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’র সংগঠক নেতা কর্মিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও অভিযুক্তদের জামিনের ব্যবস্থা গ্রহনের বিষয়ে স্বারকলিপি প্রদান এবং জনস্বার্থে প্রকৃত সত্য খবর প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, অনলাইন মিডিয়ায় তুলে ধরার জন্য আপনাদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
প্রত্যাশী- বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবুল বাশার
সদস্য সচিব ও মুখপাত্র
‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’
ফোন-০১৯৯৬-৪৪৫৪৮৭