
মোঃ রাজিউর রহমান-ভোলা :
ভোলায় গ্যাস-সংযোগের দাবিতে আন্দোলনকারীরা ইন্ট্রাকো কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডারবাহী ১০টি ট্রাক আটকে দিয়েছেন। রবিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ভোলা সরকারি স্কুল মোড়ে এই ট্রাকগুলো আটকে দেওয়া হয়। পরে ট্রাকগুলো সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে রাখা হয়।
প্রসঙ্গত, ভোলায় উত্তোলিত গ্যাস বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে বোতলজাত করে ঢাকায় পাঠানো হয়। এ নিয়ে ‘আমরা ভোলাবাসী’সহ বিভিন্ন সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। আন্দোলনকারীদের প্রধান দাবি, ভোলার গ্যাস ভোলাতেই ব্যবহার করতে হবে—গড়ে তুলতে হবে শিল্পকারখানা, এবং প্রতিটি ঘরে ঘরে দিতে হবে গ্যাস সংযোগ।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শনিবার দুপুরে তারা ইন্ট্রাকো কোম্পানির রিফুইলিং স্টেশনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। কিন্তু পরদিন রবিবার কোম্পানির কর্মীরা সেই তালা ভেঙে ট্রাকের মাধ্যমে গ্যাস নিয়ে ঢাকায় পাঠানোর চেষ্টা করেন। এ সময় রাতের বেলায় আন্দোলনকারীরা আবার সক্রিয় হয়ে সরকারি স্কুল মোড়ে মানবপ্রাচীর গড়ে ট্রাক আটকে দেন। বর্তমানে সেগুলো স্কুল মাঠে রাখা হয়েছে এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ট্রাকগুলো ছাড়া হবে না বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
ভোলা সদর মডেল থানার ওসি আবু সাহাদাৎ মো. হাচনাইন পারভেজ জানান, আন্দোলনকারীরা ট্রাকগুলো আটক রেখে স্কুল মাঠে রেখেছেন, তবে ইন্ট্রাকোর পক্ষ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ করা হয়নি। পুলিশ পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে।
এদিকে, সোমবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক জরুরি সভা করে ‘আমরা ভোলাবাসী’ সংগঠন। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীর। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক আমিরুল ইসলাম, মো. রাইসুল আলম, এনামুল হক, তরিকুল ইসলাম এবং সদস্যসচিব মীর মোশারেফ অমি।
সভায় ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে:
১. ভোলার প্রতিটি ঘরে গ্যাস সংযোগ নিশ্চিত করা।
২. গ্যাসভিত্তিক সার কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন।
৩. ভোলায় ইপিজেড (EPZ) গড়ে তোলা।
৪. ভোলায় একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি আধুনিকায়ন।
৫. ভোলা-বরিশাল সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু করা।
৬. বালু উত্তোলন বন্ধ ও নদীতীর ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ।
বক্তারা বলেন, দাবি বাস্তবায়নের দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। সদস্যসচিব মীর মোশারেফ অমি বলেন, “ইন্ট্রাকো কোম্পানি রাতের আঁধারে গ্যাস পাঠানোর চেষ্টা করে ভালো করেনি। এখন আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে যাতে গ্যাস ডিপোতে না পৌঁছাতে পারে।”
অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ষড়যন্ত্র যতই হোক, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তাদের বিশ্বাস, এই ন্যায্য দাবিগুলো পূরণ হলে ভোলার মানুষের জীবনমান উন্নত হবে এবং এলাকার সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।