
জহুরুল ইসলাম জপি-শেরপুর :
পিছিয়ে পড়া শেরপুর জেলার যৌক্তিক উন্নয়নের দাবিতে রেকর্ডসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে ‘নাগরিক মানবন্ধন’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৫ মে বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা থেকে দুপুর সোয়া ১২ টা পর্যন্ত শেরপুর প্রেসক্লাবের উদ্যোগে ওই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে শহরের খোয়ারপাড় শাপলাচত্বর মোড় থেকে অষ্টমীতলা পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সড়কের দুই পাশে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
শেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কাকন রেজার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান বাদলের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য মো. মাহমুদুল হাসান রুবেল, বিশিষ্ট সমাজসেবী ও মানবাধিকারকর্মী রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম, সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল আওয়াল চৌধুরী, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান তারা ও শফিকুল ইসলাম মাসুদ, জেলা আইনজীবী সমিতির এ্যাডভোকেট এম.কে মুরাদুজ্জামান, চেম্বার অব কমার্সের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. আরিফ হোসেন, জেলা জামায়াতের সভাপতি মাওলানা হাফিজুর রহমান, সাবেক সেক্রেটারি মাওলানা জাকারিয়া মো. আব্দুল বাতেন, শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আ.জ.ম. রেজাউল করিম খান, মডেল গার্লস কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবিএম মামুনুর রশিদ পলাশ,জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আতাহারুল ইসলাম আতা,
শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু রায়হান রূপন, প্রেসক্লাবের কার্যকরী সভাপতি রফিক মজিদ, এনসিপির জেলা প্রতিনিধি প্রকৌশলী লিখন মিয়া, জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক মামুনুর রহমান প্রমুখ।
জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আতাহারুল ইসলাম আতা, বলেন বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আমাদের পাশের জেলায় যে উন্নয়ন হয়েছে তার শতভাগের একভাগও আমাদের জেলায় হয়নি। আমরা লক্ষ্য করেছি শেরপুরের কৃষি, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং পর্যটনের উন্নয়ন খুবই প্রয়োজন এবং এটা শেরপুরের মানুষের দাবি।
জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে শেরপুরকে মহকুমা থেকে জেলায় উন্নীত করা হলেও ৪১ বছর পর সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে জেলার প্রায় ১৬ লক্ষ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ফলে শেরপুরবাসী অনেক আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এসময় জেলায় উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, উচ্চ শিক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয়, যোগাযোগের ক্ষেত্রে রেল নেটওয়ার্কের সংযোগ, পর্যটন খাতের উন্নয়ন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার লাভে অর্থনৈতিক জোন নির্মাণের দাবি করেন বক্তারা।
জেলার সর্বস্তরের মানুষের প্রাণের দাবিতে অনুষ্ঠিত এই আন্দোলনের পরও শেরপুরে দৃশ্যমান উন্নয়নের ব্যবস্থা করা না হলে, প্রয়োজনে জেলাকে শাটডাউনের মত কঠোর কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। জেলার ইতিহাসে রাজনৈতিক সমাবেশ ছাড়া সর্বোচ্চ জনসম্পৃক্ততা লক্ষ্য করা গেছে এ মানববন্ধনে। মানববন্ধনে জেলার দুই শতাধিক রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে শহরের অষ্টমীতলা থেকে খোয়ারপাড় শাপলাচত্বর মোড় পর্যন্ত সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে মানববন্ধনটি জনসমাবেশে রূপ নেয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের জরুরি স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক ৪টি এ্যাম্বুলেন্সে ৪জন সরকারি চিকিৎসকসহ বেশ কয়েকজন করে নার্স সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ ছিলেন। সর্বস্তরের মানুষের তৃষ্ণা মেটাতে শতাধিক স্বেচ্ছাসেবকের একটি দল পানি সরবরাহ করেছে। যে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কয়েকটি গাড়ি সার্বক্ষণিক নজরদারি করেছে মানববন্ধনটিকে। তবে কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি শেষ হয়।