
ক্রাইম রিপোর্টার :
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার শহরের হাটলক্ষিগঞ্জ লঞ্চঘাটে যাত্রাবিরতির জন্য থেমে থাকা লঞ্চে অনৈতিক কাজের অভিযোগে দুই তরুণীকে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনায় জিহাদ ওরফে জিহাদ হাসান (২৪)নামের একজনকে সহ অজ্ঞাতনামা ২৫ জনকে আসামী করে মামলা হয়েছে।
এ ঘটনায় রবিবার(১১ মে) জিহাদ ওরফে জিহাদ হাসান এর বিরুদ্ধে ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন সহ আদালতে আনা হলে মুন্সীগঞ্জ আমলি আদালত -১ এর বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সোমবার রিমান্ডের আবেদন শুনানীর তারিখ ধার্য করা সহ আসামীকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
গ্রেফতারকৃত নেহাল মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ ইসলামপুর(যোগনীঘাট) এলাকার মো:মনিরুজ্জামানের ছেলে।
এর আগে যৌন নিপীড়ন, বেআইনি জনতাবদ্ধে,মারধর করে ভাঙচুর,ক্ষতি ও হুমকির অপরাধে প্রেক্ষিতে মুক্তারপুর নৌপুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই)মোহাম্মদ মিলন বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারাসহ পেনাল কোডের অন্যান্য ধারায় মুন্সীগঞ্জ থানায় জিহাদ ওরফে জিহাদ হাসান সহ অজ্ঞাতনামা আরো ২৫ জনকে আসামী করে মামলা করেন।এ ঘটনায় এর আগে শনিবার দুপুরে এই ঘটনার নায়ক নেহাল মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় সেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছেন।ওই দিন পুলিশ তাকে গ্রেফতার দেখায়।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে মুন্সীগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো:সাইফুল আলম রবিবার বেলা পৌনে ১২ টার দিকে গণমাধ্যমকে বলেন, শুক্রবার ১৯-২০ বছর বয়সী দুই তরুণীকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।সে ঘটনার প্রেক্ষিতে শনিবার আমরা জিহাদকে থানায় আসতে বলি। সে থানায় আসলে তাকে আটক করি।ঘটনার মামলা করার জন্য ওই তরুণীদের ও লঞ্চ কর্তৃপক্ষকেও অভিযোগ দিতে বলা হলে তারা থানায় আসেনি। সব শেষ রবিবার সকালে মুক্তারপুর নৌ-পুলিশ বাদি হয়ে মারধর,লঞ্চ ভাঙচুর এবং লঞ্চে লুটপাটের ঘটনায় মামলা করেছে।মামলায় একজনের নাম উল্লেখ্যসহ অজ্ঞাত আরো ২০-২৫ জনকে আসামী করা হয়েছে।মামলাটি নৌ পুলিশ তদন্ত করবে।নেহাল আহমেদকে রবিবার আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানাজায়,গেলো শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে ২০০-৩০০ জন যাত্রী নৌভ্রমণে বের হন।প্রথমে লঞ্চটি রাজধানীর সদরঘাটে থামে। সন্ধ্যার দিকে লঞ্চটি চাঁদপুরের মোহনপুরের উদ্দেশে সদরঘাট থেকে ছেড়ে আসে।পথিমধ্যে পিকনিকের চাঁদা দেওয়া নিয়ে ওই লঞ্চের যাত্রীদের মধ্যে কিছুটা ঝামেলা হয়।রাত আটটার দিকে নাশতা নেওয়ার জন্য মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে লঞ্চটি থামানো হয়।সে সময় ওই লঞ্চের কয়েকজন তরুণ-তরুণীকে স্থানীয় লোকজন মাদকাসক্ত অবস্থায় দেখতে পান।পরে লোকজন লঞ্চের ভেতরে গিয়ে তল্লাশি চালান।সেখানে কয়েকজনকে আপত্তিকর অবস্থায় পেয়ে লঞ্চে ভাঙচুর করেন তাঁরা।কয়েকজনকে মারধর করেন।খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে লঞ্চটিকে ঢাকার দিকে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
লঞ্চের মারধরের ঘটনায় আটক নেহাল আহমেদ অনুতপ্ত হয়ে তিনি বলেছেন,তাঁর ভুল সে বুঝতে পরেছে,আইনের প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল।তাই নিজেই থানায় গিয়েছিলেন।নেহাল আরো বলেন,তরুণীদের উত্তেজিত জনতার হাত থেকে বাঁচাতে বড় ভাই হিসেবে শাসন করেছিলেন।
উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই বলেন মূলত পিকনিকের লঞ্চ দেখে ফাফর দিয়ে চাঁদা আনতে গেলেই বিপত্তি ঘটে।পরবর্তীতে অসামাজিক কার্যকলাপের অযুহাত তুলে বাঁচার চেষ্টা করে হামলাকারীরা।
এ ব্যাপারে আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো: আমান উল্লাহ প্রধান শাহীন বলেন,আসামীর রিমান্ড ও জামিন শুনানীর জন্য বিচারক আগামীকাল সোমবার ধার্য রেখেছে।
আদালতের কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো:কামরুল ইসলাম মিঞা জানান, ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন সহ জিহাদ ওরফে জিহাদ হাসান নামের এক আসামীকে আদালতে আনা হয়েছে।আগামীকাল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে শুনানি হবে। আদালত আসামীকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।