
ক্রাইম রিপোর্টার :
পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের ১২নং কানাপাড়া ঠেকরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান চলছে পরিত্যক্ত ভবনে।
ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভয়-উৎকণ্ঠায় শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।নতুন ভবনের দাবি করছেন তারা।গতকাল রবিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,বিদ্যালয়ের পরিত্যাক্ত ভবনটির বেহাল অবস্থা।দেয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল।
ছাউনির টিনগুলোও জরাজীর্ণ। ভবনটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন সংশ্লিষ্টরা।জানা গেছে, বিদ্যালয়টি ১৯১৯ সালে স্থাপিত হয়,বিদ্যালয়টিয় বয়স প্রায় ১০৬ বছর এর মধ্যে ১৯৮৪ সালে বিদ্যালয়টির পরিত্যক্ত এই টিনসেড ভবনটি নির্মাণ করা হয়।
এদিকে,পরিত্যক্ত টিনসেড ভবনটির টিনগুলো ছিদ্র যুক্ত হওয়ায় বৃষ্টির পানি পড়ে এবং দেয়ালগুলো স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থায় থাকে,দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল, যেকোনো মুহুর্তে তা ধসে পড়তে পারে।ভবনের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আতঙ্কে রয়েছেন। শ্রেণিকক্ষগুলো ব্যবহারে অযোগ্য হয়ে পড়েছে।যেকোনো সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে শিক্ষার্থীরা। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। এমতাবস্থায় ভবনটির শ্রেণিক্ষে পাঠদান প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী মাহির রায়হান ও নুসরাত জান্নাত লিমা জানায়,বৃষ্টির দিনে তাদের দুর্ভোগ বাড়ে।দ্রুত একটি নতুন ভবনের দাবি তাদের।
জাহাঙ্গীর আলম নামের এক অভিভাবক বলেন,আমরা যখন ছোট ছিলাম,তখনও এই ভবনেই বসতাম আমরা।ভবনটি অনেক পুরোনো,যে কোন ধরণের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই নতুন ভবন করা উচিত।
শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, শ্রেণিকক্ষ সংকুলানের কারণে বাধ্য হয়েই আমরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিত্যক্ত ভবনটিতে পাঠদান করাচ্ছি।আশা করছি সংশ্লিষ্টরা খুব দ্রুতই বিদ্যালয়ের দিকে নেক দৃষ্টি দিবেন।এ বিষয়ে কানাপাড়া ঠেকরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার দত্ত বলেন, ‘বিদ্যালয়ে ২০৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়টিতে ভবন সংখ্যা দুটি। পাকা (পিডিইপি-২) ভবনটি দুই কক্ষ বিশিষ্ট, যার একটি অফিস কক্ষ ও অপরটি ডিজিটাল ক্লাস ও আইসিটি ল্যাব হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরিত্যক্ত টিনসেড ভবনটিতে কক্ষ সংখ্যা চারটি,তিনটি শ্রেণিকক্ষ ও ছোট কক্ষটি স্টোর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।টিনসেড ভবন পরিত্যক্ত হওয়ায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে।পরিত্যক্ত ভবনে বাধ্য হয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে।সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়।
তিনি বলেন,টিনসেড ভবনটি গত ২১ মার্চ ২০২২ তারিখে উপজেলা শিক্ষা কমিটির মিটিংএ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।পরিত্যক্ত ভবনটি উপজেলা প্রকৌশলী এলজিইডি গত ১৬ মে ২০২২ তারিখে ভবনটি নিলামে ডাক দেওয়ার জন্য প্রাক্কলিত মূল্য নির্ধারণ করেন।কিন্তু অদ্যাবধি কোনো নতুন ভবন নির্মাণ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে সেই পরিত্যক্ত ভবনেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রেণি পাঠদানের কাজ করতে হচ্ছে।শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জীবনের ঝুঁকি বিবেচনা করে এখনই নতুন ভবন প্রয়োজন এবং এর জন্য উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা এবং প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছি।উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জ্যোতিস্ময় রায় বলেন, কানাপাড়া ঠেকরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত টিনসেড ভবন সম্পর্কে আমরা অবগত।এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। উক্ত বিদ্যালয়ের নতুন ভবন না থাকায় বাধ্য হয়ে পরিত্যক্ত ভবনের শ্রেণিকক্ষেই পাঠদান হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সমেশ চন্দ্র মজুমদার বলেন পরিত্যক্ত ভবন বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না।আমার ডিপার্টমেন্ট এ বিষয়ে আমাকে অবগত করেনি।আমি আপনার মধ্যমে জানতে পারলাম।আমি আজকেই জরুরি ভিত্তিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর বিষয়টি লিখবো যাতে করে অতিদ্রুত উক্ত বিদ্যালয়ে নতুন একটি ভবনের বরাদ্দ দেয়া হয় এবং বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন জানান, পরিত্যক্ত ভবনে ক্লাস হচ্ছে, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নতুন ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।