
খিলাফত উনার মসনদে তখন আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনি ছিলেন অত্যন্ত পরহেযগার, অনাড়ম্বর এবং দুনিয়াবিমূখ। এ বিষয়টি তৎকালীন মুসলিম জাহানের সবাই প্রায় অবগত ছিলো।
উনার শাসনামলে হিলাল ইবনে আবি বুরদাহ নামক এক ব্যক্তি মনে মনে ফন্দি আঁটল, খলীফা যেহেতু ইবাদতগুজার অনেক পছন্দ করেন। খলীফা যে মসজিদে নামায আদায় করেন সেখানে গিয়ে আমিও যদি প্রচুর ইবাদত বন্দেগী করে উনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হই, তাহলে আর আমাকে পায় কে। আমার ইবাদতে খুশি হয়ে তিনি নিশ্চয়ই আমাকে বড় কোনো পদে নিয়োগ দেবেন।
যেই কথা সেই কাজ। সে গিয়ে খুবই একাগ্রচিত্রে বিরামহীনভাবে নামায, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, যিকির ইত্যাদিতে মশগুল হয়ে গেল। কারো সঙ্গে তেমন কোনো কথা বলতো না। অল্পদিনেই তার সুনাম, সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কানেও গেলো। তিনি বিষয়টি শুনে অনেক খুশি হয়ে উনার এক সহকর্মীকে বললেন, লোকটা তো অনেক একাগ্রচিত্তে ইবাদত করছে। আমার মনে হয়, এই ইবাদতের পেছনে তার অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। খালিছ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যই ইবাদত করছে।
উনার সহকারীর নাম আলা ইবনে মুগীরা। তিনি বললেন, আমীরুল মু’মিনীন! এত তাড়াতাড়ি কাউকে বিশ্বাস করবেন না। তার মনে কী আছে তা আজই বের করার ব্যবস্থা করছি।
ওইদিন মাগরিবের পর নামায শেষে যে যার যার বাড়ি চলে গেলেন। হেলাল নফল নামায পড়ছিলো। আলা ইবনে মুগীরা আস্তে আস্তে তার দিকে এগিয়ে গেলেন। পাশে গিয়ে নিচু স্বরে বললেন, দুই রাকাত পড়ে তাড়াতাড়ি সালাম ফিরিয়ে দাও। জরুরি কথা আছে। সে তাড়াতাড়ি নামায শেষ করলো। আলা ইবনে মুগীরা তিনি প্রায় ফিসফিস করে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন, তোমার তো জানা আছে আমি আমীরুল মু’মিনীন উনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ লোক। আমি কোনো অনুরোধ করলে তিনি সাধারণত প্রত্যাখ্যান করেন না। আমি যদি আমীরুল মু’মিনীন উনার নিকট সুপারিশ করে তোমাকে ইরাকের গভর্নর বানিয়ে দেই, তাহলে কেমন হয়?
হেলালের চোখ দু’টো মুহূর্তেই লোভে চকচক করে উঠল। মনে মনে বললো, যাক, আমার এতদিনের পরিশ্রম তাহলে বৃথা যাচ্ছে না। হেলাল বললো, আপনি যখন এতো করে বলছেন, আমি কীভাবে রাজী না হয়ে পারি বলুন। আপনি আমীরুল মু’মিনীন উনার সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলতে পারেন। আমার কোনো আপত্তি নেই।
তখন আলা ইবনে মুগীরা বললেন, তোমাকে এই সুবিধা আমি করে দিবো কিন্তু এর বিনিময়ে গভর্নর হওয়ার পর তুমি আমাকে তোমার এক বছরের বেতন ১ লাখ ২০ হাজার দিনার দেবে। হেলাল এতে রাজী হয়ে গেলো। কিন্তু আলা ইবনে মুগীরা তিনি বললেন, তোমার মুখের কথায় চলবে না। তুমি এটি লিখিত দাও আমাকে। হেলাল তখন ক্ষমতার নেশায় বিভোর। তৎক্ষণাৎ এই কথাগুলো লিখে নিচে নিজের নাম দস্তখত করে দিলো।
আলা ইবনে মুগীরা মোটেও দেরি করলেন না। কাগজটি নিয়ে তৎক্ষণাৎ খলীফা উনার চোখের সামনে মেলে ধরলেন। এই যে আমীরুল মুমিনীন! আপনি যাকে খাঁটি ইবাদতগুজার মনে করেছিলেন তার আসল উদ্দেশ্য নিজ চোখেই দেখুন। এ জন্যই এত লম্বা লম্বা নামায, তিলাওয়াত, যিকির করা হচ্ছিলো। থলের বিড়াল এখন বেরিয়ে এসেছে।
হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হেলালের এহেন উদ্দেশ্যে যারপরনাই বিস্মিত হলেন! ভাবলেন, মানুষের মন এতো ছোট? সামান্য পার্থিব ক্ষমতার লোভে চিরস্থায়ী ইবাদতগুলোকে নষ্ট করছে। তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হলেন। ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক হয়ে গেলেন।
সংকলনে: মুহম্মদ শাহ জালাল।