
ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের কর্ণধার মুসলমানরাই। তবে ব্রিটিশ পরবর্তী সময়ে বিধর্মী ইতিহাস লেখকরা মুসলমানদের সকল অবদানই ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে। যাতে পরবর্তী প্রজন্ম মুসলমানদের অবদান সম্পর্কে অবগত হতে না পারে।
উপমহাদেশে ব্রিটিশদের ২০০ বছরের শাসনে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের হাতে অসংখ্য ব্রিটিশ অফিসার নিহত হয়েছে। তবে ২০০ বছরের মধ্যে কেবলমাত্র একজন গভর্নর জেনারেলকেই হত্যা করা সম্ভব হয়েছিলো। আর এই মহৎ অবদানও একজন মুসলমানের। কিন্তু ব্রিটিশবিরোধী এই মুসলিম বীরের নাম ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পায়নি।
ব্রিটিশবিরোধী এই মুসলিম বীরের নাম মুহম্মদ শের আলী খান আফ্রিদী। উনার নিবাস ছিলো তৎকালীন পাকিস্তানের খাইবারপাস প্রদেশের নিকটবর্তী জামরুদ গ্রামে। তিনি আমিরুল মু’মিনীন হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিত আদর্শ মুবারক অনুসরণ করতেন। প্রথম জীবনে তিনি ব্রিটিশ সরকারের অধীনে মাউন্ট পুলিশে চাকরি করতেন। তবে ভেতরে ভেতরে তিনি একজন ব্রিটিশবিরোধী ছিলেন। ফলে ১৮৬৭ সালে তিনি এক ব্রিটিশ গুপ্তচরকে হত্যা করেন এবং উনাকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়ে আন্দামান দ্বীপে নির্বাসিত করা হয়।
জেলখানায় শের আলী খান আফ্রিদীর ব্যবহার ছিল অনন্য। তিনি ছিলেন অনেক পরহেযগার এবং দয়ালু প্রকৃতির। সদা শান্ত-শিষ্টভাবে থাকতেন। জেলখানায় নাপিতের কাজ করে যা আয় করতেন তা অন্যান্য সহযোগীদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। জেলখানায় তিনি খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। কিন্তু উনার হৃদয়ে জ্বলছিল আগুন। তিনি উপমহাদেশে ব্রিটিশদের অত্যাচারের বদলা নেয়ার কথা ভাবতে থাকেন। সেই সুযোগ চলেও আসে।
১৮৭২ সালের ০৮ ফেব্রুয়ারী ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল মেয়ো হ্যারিয়েট দ্বীপের পাশে সূর্যাস্ত দেখতে যায়। সে সময় দেহরক্ষী বেষ্টিত থাকলেও তাকে অতর্কিতে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন শের আলী খান। গভর্নর জেনারেলের এমন হত্যাকান্ড ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের ভিত নড়ে যায়।
হত্যা করার পর তিনি পালিয়ে যাননি। সেখানেই দাড়িয়ে ছিলেন এবং উনাকে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন কথিত বিচারে উনাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় এবং জিজ্ঞাসা করা হয় আরও কেউ এই হত্যাকান্ডে জড়িত আছে কিনা? তখন তিনি জবাব দিয়েছিলেন, “খোদা নে হুকুম দিয়া। মেরা শারীক কোই আদমি নেহি। মেরা শরীক স্রেফ খোদা হ্যায়। ” অর্থাৎ আমাকে এ কাজ করার জন্য স্বয়ং আল্লাহ পাক তিনিই হুকুম দিয়েছেন। আমার শরীক অন্য কেউ নাই, আমার শরীক হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহ পাক।
১৮৭৩ সালের ১১ মার্চ আন্দামানের ভাইপার দ্বীপে উনাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শহীদ করা হয়। ফাঁসির দিন ফাঁসির দড়িকে চুম্বন করে তিনি পবিত্র কালেমা শরীফ পাঠ করতে করতে শহীদ হয়ে যান।
ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে এত বড় অবদান রাখার পরও শের আলী আফ্রিদীর নাম ইতিহাসে স্থান পায়নি। স্থান পেয়েছে কথিত ক্ষুদিরামের নাম। ক্ষুদিরাম গভর্নর জেনারেলকে হত্যা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে দুই ব্রিটিশ নারীকে হত্যা করে ফাঁসিতে ঝুলেছিলো। আর বিপরীতে শের আলী খান আফ্রিদী শুধুমাত্র মুসলমান হওয়ার কারণেই গভর্নর জেনারেলকে হত্যা করার পরও উনার অবদানকে দাবিয়ে রাখা হয়েছে। তবে তারা জানে না, মুসলমানদের ইতিহাস কখনো দাবায়ে রাখা যায় না।
সূত্র:
* Delhi Red port Museum Gallay, Delhi, India.
* শের ই শহীদ দ্বীপ, কলকাতা ২০০৩।
* মুক্তির সংগ্রামে ভারত। বাংলা আকাদেমী পশ্চিমবঙ্গ ভারত ১৯৯৬।