
মুন্সীগঞ্জে মুষলধারে বৃষ্টিতে দুশ্চিন্তায় আলু চাষিরা
ক্রাইম রিপোর্টারঃ
মুন্সীগঞ্জের উঁচু জমিগুলো হতে আলু উঠতে শুরু করেছে।আর এই আলু উঠানোর মধ্যেই মুন্সীগঞ্জের বিভিন্নস্থানে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে।শনিবার সন্ধা হতে ঘন্টাব্যাপী বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে আলু চাষিদের।কোথাও কোথাও নীচু জমিতে পানি জমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।জমির আলু গাছ ঝড়ো বাতাসে জমির সাথে নুয়ে পড়েছে।এতে হতাশা বাড়ছে কৃষকদের।কতিপয় আলু চাষির সাথে কথা বলে জানা গেছে, জমিতে হালকা পানি জমেছে। তবে যে পানি জমেছে তা মাটি শোধন করে নিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।তবে আরো বৃষ্টিপাত হলে আলু জমি তলিয়ে আলু নষ্ট হওয়ার শঙ্কা করছেন তারা।মুন্সীগঞ্জ সদর, গজারিয়া ও টংঙ্গীবাড়ী উপজেলার বিভিন্নস্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এই জেলার উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হয়েছে।পদ্মা পারের দক্ষিণাংশে বৃষ্টিপাত অনেকটা কম হয়েছে।
টংঙ্গীবাড়ী উপজেলার মধ্যাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের ব্যাপক বৃষ্টি হলেও পদ্মা পারের পাঁচগাঁও, কামাড়খাড়া,হাসাইল , দিঘিরপাড় অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ কম ছিল।তাছাড়া মুন্সীগঞ্জ সদর ও টংঙ্গীবাড়ী উপজেলার চরাঞ্চলে তেমন বৃষ্টি হয়নি বলে জানা গেছে।
টংঙ্গীবাড়ী উপজেলার বলই গ্রামের আলু চাষি বাচ্চু ঢালী বলেন,শনিবার সন্ধ্যা হতে ঘণ্টা ব্যাপী প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে।সেই সাথে ঝড়ো হাওয়াও ছিল।তবে অনেকদিন পর বৃষ্টি হওয়া বৃষ্টির পানি মাটি চুষে শোধন করে ফেলেছে।আবার যদি দু- একদিনে বৃষ্টি হয় তাহলে আলুর জমিতে পানি জমে ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।মুন্সীগঞ্জের নীচু জমিগুলোর আলু উঠতে আরো ১০/১২ দিন সময় লাগবে।এ সময় এ বৃষ্টিপাত কৃষকের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে।তবে এ বছর আলুর দাম কম থাকায় চাষিদের চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ আগে থেকেই ছিল।ঘাম ঝরিয়ে চাষ করা আলুর বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না কৃষক।বর্তমানে বাজারে কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ১৩/১৫ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।অথচ প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে ১৮ থেকে ২০ টাকা।তার ওপর হিমাগারের ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।কৃষকের দাবি,সস্তায় আলু কিনে এবার মধ্যস্বত্বভোগীরা হিমাগার ভিত্তিক সিন্ডিকেট করে ফায়দা লোটার পরিকল্পনা করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,এ বছর মুন্সীগঞ্জ জেলার ৩৪ হাজার ৭৫৮ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে।ইতোমধ্যে জমি থেকে আলু তোলা শুরু হয়েছে।তবে কৃষক আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে রাখতে পারছেন না। পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।এতে ক্রমেই কমছে আলুর দাম।তাদের এ বছর প্রত্যাশা লাভ নয় মূলধন পেলেই এ বছর সন্তুষ্ট থাকবেন তারা। কিন্তু বর্তমানে আলুর বাজারের যে অবস্থা তাতে মোটা অংঙ্কের টাকা লোকসান গুনতে হবে।
এ জন্য অনেক জমিতে আলু পরিপক্ব হয়ে থাকলেও জমি হতে তুলছেন না কৃষক।এ বছর অধিক মুনাফায় উৎপাদিত ফসলের বাড়তি যন্ত্র ও শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এখনো অনেক জমিতে ঔষধ স্প্রে করছেন কৃষক।আলু উৎপাদনের অন্যতম শীর্ষ জেলা মুন্সীগঞ্জের উঁচু জমিগুলোতে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে এবং নীচু জমিগুলোর গাছের ধরন দেখে বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষক।তাদের দাবি ফলন ঘরে তুলতে পারলে এ বছর উৎপাদন অন্যান্য বছরের তুলনায় ভালো হবে।সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের অন্যতম শীর্ষ আলু উৎপাদনকারী জেলা মুন্সীগঞ্জে চলছে আলু চাষের বিশাল কর্মযজ্ঞ।এই কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণ করেছেন দেশের উত্তরাঞ্চলের লক্ষাধিক শ্রমিকসহ কৃষকদের ঘরের গৃহিনীরাও।ঘাম ঝড়িয়ে চাষ করা ফসলের বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্য দাম নিয়ে বাড়ছে শঙ্কা।১৩ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে জমিতে বিক্রি হচ্ছে আলু। কৃষকের দাবি,খরচ পড়েছে কেজিতে ১৮ টাকা পর্যন্ত।তাই মৌসুমের শুরুতেই লোকসানের মুখে তারা।এই লোকসান থেকে বাঁচতে আলু সাধারণত হিমাগারে রাখেন।কিন্তু এবার হিমাগার ভাড়া দ্বিগুণ বাড়িয়ে প্রতিকেজি ৮ টাকা নির্ধারণ করেছে হিমাগার সমিতি। গত বছরও ৫০ কেজির প্রতি বস্তার ভাড়া ছিল ২০০ থেকে ২৫০। এবার তা ৪০০ টাকা ঘোষণা করেছে হিমাগার সমিতি। এতে ক্ষুদ্ধ কৃষক।এ অবস্থায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় হিমাগার চালুর দাবি তাদের।কৃষকরা বলছেন,আগে হিমাগারের ভাড়া ছিল ২০০ টাকা। এখন ৪০০ টাকা। আলুর দাম বাজারে ১২-১৩ টাকা আর হিমাগার ভাড়া দিতে হবে কেজি প্রতি ৮ টাকা।হিমাগার ভাড়া নির্ধারণ করে দিলো সরকার তবে কৃষকের আলুর দাম কেন নির্ধারণ করে দিলোনা।কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া অনেক বেশি হয়ে গেছে বলে দাবি তাদের। কতিপয় আলুচাষিরা জানিয়েছেন,বর্তমানে উঁচু জমির আলু উত্তোলন চলছে।এক সপ্তাহ পর এবং মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে পুরোদমে আলু উত্তোলন শুরু হবে।এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন তারা।তবে তাদের মুখে স্বস্তির হাসি নেই,দুশ্চিন্তার ছাপ।
মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, কোল্ড স্টোরেজের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি।ভাড়া রিভাইস (পুনর্মূল্যায়ন)করার আহ্বান জানিয়েছি।হিমাগার মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, সমিতি থেকে দেশব্যাপী কেজিপ্রতি ৮ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।এর পরও মুন্সীগঞ্জের আলুচাষিদের স্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টা করা হবে।
কদম রসুল কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের মালিক দুলাল মণ্ডলের ভাষ্য,খরচ বেশি। এ কারণে চলতি মৌসুমে ভাড়াটা বাড়ার সম্ভাবনা বেশি।মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সামির হোসেন সিয়াম বলেন, ভাড়াটা একটু বেশি হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আমাদের কোনো সহায়তা করতে পারি কিনা, চেষ্টা করে দেখব।মুন্সীগঞ্জে সচল ৫৮ হিমাগারের ধারণক্ষমতা ৫ লাখ ৪০ হাজার ৭৬০ টন। আর এবার জেলায় আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ১০ লাখ টন। বাকি আলু কৃষক জমিতে এবং বাড়িতে সংরক্ষণ করেন এবং জমি হতে বিক্রি করে থাকেন। তবে কৃষকদের দাবি উত্তরাঞ্চল হতে আলু এনে আলু ব্যবসায়ীরা মুন্সীগঞ্জের হিমাগার গুলো আগেই ভরে ফেলেন তারা ঠিকমতো আলু সংরক্ষণ করতে পারেন না।