
দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির প্রায় সব বিদেশি সহায়তা কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের এমন অবস্থানে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কঠিন করে তুলতে পারে। তবে ঢাকা আশা করছে, রোহিঙ্গাদের অর্থ সহায়তা বন্ধ করবে না যুক্তরাষ্ট্র।
সোমবার ৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘দ্য রোহিঙ্গা ইন বাংলাদেশ: ইন সার্চ অব এ সাসটেইনেবল ফিউচার’- শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে এসব কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, মানবিক সহায়তা কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের ওপর আরও বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, বিশ্বের অনেক একে অন্যের দেখাদেখিতে সহায়তা কমিয়ে আনছে। যুক্তরাষ্ট্র নতুন যে অবস্থান নিয়েছে, তা পরিস্থিতি কঠিন করে তুলতে পারে। আশা করি রোহিঙ্গাদের জন্য তারা অর্থ সহায়তা বন্ধ করবে না।
রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহায়তা কমিয়ে আনছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহযোগিতা কমিয়ে আনছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তাদের চাহিদা সরবরাহ অব্যাহত রাখা। এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তাদের প্রত্যাবাসন। এ বিষয়ে আমি প্রত্যাবাসনের পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপে জোর দিতে চাই।
তিনি বলেন, প্রথমে পাইলট প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গাদের নিয়ে গিয়ে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখাতে পারে যে আমরা সংকট সমাধানের পথে রয়েছি। এরপর হয়ত তারা আর রোহিঙ্গাদের নিলো না। ফলে পাইলট প্রকল্পে স্বল্পভাবে যাওয়া শুরু করলো, তবে প্রত্যাবাসনের সম্পূর্ণ রোডম্যাপ থাকতে হবে।
আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ একীভূত করবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়। এটি হয়ত এ মুহূর্তে আমাদের সীমানার মধ্যে রয়েছে। তবে এ বিষয়টিতে এখনই মনোযোগ না দিলে এটি শুধু আর বাংলাদেশের সংকট থাকবে না।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের আন্তরিকতার সমালোচনা করে তৌহিদ হোসেন বলেন, চীন শুরু থেকে সংকট সমাধানে তাদের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে আসছে। এটি তাদের তাত্ত্বিক অবস্থান। তবে বাস্তবিক অর্থে খুব বেশি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। মিয়ানমারে চীনের গভীর স্বার্থ রয়েছে। সম্প্রতি চীন সফরে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন যে তারা সংকট সমাধানে চেষ্টা করবেন।
তিনি আরও বলেন, এখন রাখাইন অঞ্চল আরাকান আর্মির দখলে। চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের সব অংশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ চীনকে আলোচনার মাধ্যমে মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে অনুরোধ করেছে। একটি শান্তিপূর্ণ মিয়ানমার যেমন বাংলাদেশের প্রয়োজন তেমনি চীনেরও প্রয়োজন।
রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের একটিই সমাধান, সেটি হচ্ছে প্রত্যাবাসন। তবে প্রত্যাবাসনটি হতে হবে তারা যেখান থেকে বিতাড়িত হয়েছে, সে স্থানে অধিকার ও নিরাপত্তাসহ। অন্যস্থানে তাদের পুনর্বাসন করলে হবে না। আর এ সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা প্রয়োজন রয়েছে। তাদের নিশ্চিত করতে হবে রোহিঙ্গাদের ওপর যাতে একই ধরনের নৃশংসতা আর যাতে কখনো না হয়।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ইতিহাস দেখলে দেখবেন যে গণহত্যার মতো অপরাধ কখনই শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হয়নি। সবসময়ে একটি সংঘাতের মধ্য দিয়ে এর সমাধান এসেছে। রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকে বলেছি, এর সমাধান কখনই শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনার মধ্য দিয়ে হবে না।
বর্তমানে মিয়ানমারে যে সংঘাতময় পরিস্থিতি চলছে তা হয়ত রোহিঙ্গাদের জন্য সুখবর নিয়ে আসতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি হয়ত সংকট সমাধানের একটি সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে পারবে। তবে এটি নিশ্চিত নয়। মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ শেষ হলে দেশটি আগের অবস্থায় ফেরত যেতে পারবে না। ফলে সেখানে একটি পরিবর্তন আসবে।