
হর্ষিত রানার বলে অ্যালেক্স ক্যারির বোল্ডে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংস থামল ২৩৮ রানে। ভারত ম্যাচ জিতে নিল ২৯৫ রানের বড় ব্যবধানে। সেই সঙ্গে পাঁচ টেস্টের বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফিতে ভারত এগিয়ে গেল ১–০ ব্যবধানে।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলতে নামলেই যেন বদলে যায় ভারত। সে গত বার অ্যাডিলেডে ৩৬ রানে অল আউটের লজ্জা কাটিয়ে, চোটে প্রায় হাসপাতালে পরিণত হওয়া একটা দলের সিরিজ় জেতা হোক, বা এ বার ঘরের মাঠে চুনকাম হয়ে খেলতে যাওয়া দলের প্রথম টেস্ট জিতে এগিয়ে যাওয়া। পার্থেও শুরুটা ভাল হয়নি। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৫০ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল ভারত। মসকরা শুরু হয়েছিল এই বলে যে নিউ জ়িল্যান্ড দেখিয়েছে ভারত স্পিন খেলতে পারে না। এ বার অস্ট্রেলিয়া দেখাল ভারত পেসও খেলতে পারে না। কিন্তু সেই মসকরা সত্যি হল না। কারণ, প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে তাদের মাঠেই ১০৪ রানে অল আউট করে জবাব দিল ভারত। বলা ভাল জবাব দিলেন যশপ্রীত বুমরা। যে পিচে বোলারদের জন্য কিচ্ছু থাকে না, সেখানেও তিনি ভাল বল করেন। পার্থে প্রথম দিন বোলারেরা যা সুবিধা পেলেন, তা কাজে লাগালেন বুমরাও।
পরের দেড় দিন ভারতের ব্যাটারদের। ১৫০ রানে অল আউট হয়ে যাওয়া দল দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ৪৮৭ রানে ডিক্লেয়ার দিল। ১৬১ রান করলেন যশস্বী জয়সওয়াল। বিরাট কোহলি করলেন ১০০ রান। চতুর্থ ইনিংসে ৫৩৪ রান করা প্রায় অসম্ভব ছিল। সে যতই তত ক্ষণে পিচ অনেক সহজ হয়ে যাক না কেন। তার মধ্যে তৃতীয় দিন শেষ কয়েক ওভারে ১২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে আরও চাপে পড়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। চতুর্থ দিন বাকি ৭ উইকেট তুলতে হত। সেটা তুলতে পুরো তিন সেশন লাগল না ভারতের।
গত বার এক তারকার জন্ম হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। ঋষভ পন্থ। ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়ার দম্ভ চুরমার করে ভারতকে সিরিজ় জিতিয়েছিলেন তিনি। এ বার পার্থে জন্ম নিলেন যশস্বী। এর আগেও তিনি টেস্টে অনেক ভাল ইনিংস খেলেছেন। কিন্তু পার্থে দ্বিতীয় ইনিংসে যেটা খেললেন সেটা হয়কো সকলের উপরে থাকবে।
ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপে ক্রমশ ভরসার নাম হয়ে উঠছেন তরুণ ওপেনার যশস্বী। দেশের মাটিতে যেমন সাবলীল, বিদেশের মাটিতেও তেমন স্বচ্ছন্দ। ব্যাটিং টেকনিক ভাল না হলে সম্ভব নয়। পার্থের দ্রুতগতির পিচে অস্ট্রেলিয়ার জোরে বোলারদের কী ভাবে সামলাতে হয়, তা হাতেকলমে দলের সিনিয়রদের দেখিয়ে দিলেন ১৬১ রানের ইনিংসে। তাঁর ২৯৭ বলের ইনিংসে ১৫টি চার এবং ৩টি ছয় রয়েছে। সুইং নিয়ে অযথা ভয় না পেয়ে বলের গতির মোকাবিলা করলেন ব্যাক ফুটে খেলে। প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্কেরা তাঁকে তেমন সমস্যাতেও ফেলতে পারলেন না। বিট অবশ্যই হয়েছেন। কিন্তু উইকেটে টিকে থাকার চেষ্টা করেছেন ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত। অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যাট করার জন্য ঠিক যেমন মানসিকতা প্রয়োজন, তেমন ভাবেই খেলেছেন। ব্যাট হাতে যেমন প্রতিপক্ষের আক্রমণ মোকাবিলা করেছেন, তেমন স্টার্কদের স্লেজিংয়ের জবাব মুখে দিতেও ভাবেননি।