
সব মানুষের মন আছে। মন নিয়ন্ত্রণ করে চিন্তা ও কল্পনার গতি। স্বাভাবিক কিংবা বিশেষ যেকোনো অবস্থার মানুষ তাই নানা বিষয় ভাবে, দেখা বিষয়ের সঙ্গে কল্পনা করে অদেখার জগতকেও। তার দৃশ্যকল্প ফুটিয়ে তোলে শিল্প, সাহিত্য, চিত্রকলা নানা মাধ্যমে। স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে কাজটি সহজ। ভাবনাকে তার মতো বা তার ভাষায় ফুটিয়ে তুললেই হয়। দক্ষতা আর যোগ্যতায় তার কোনোটা হয়ে ওঠে শিল্প, কোনোটা হয়তো ভাবনার প্রকাশমাত্র। তবে যদি বলি বিশেষ মানুষের কথা- যারা সারাক্ষণই নিজের শরীর ও মনের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ নিয়ে বেড়ে উঠছে তারাও কি পারে গাইতে, নাচতে, কিংবা ছবি আঁকতে? উত্তর- হ্যাঁ, পারে। রাজধানীতে শনিবার দেখা গেল তেমনই এক অবাক করা চিত্রশিল্পের প্রদর্শনী; যেখানে অটিজমের ভুবন অতিক্রম করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে সারাক্ষণ যুদ্ধরত বিশেষ শিশুরা তাদের মনোজগতে কল্পনা করা নানা বিষয়ের নান্দনিক প্রতিচ্ছবি এঁকেছে।
এই বিশেষ শিশুদের নিত্যকার চ্যালেঞ্জ মাথায় রাখলে ছবি আঁকতে পারা ও সুনির্দিষ্ট রঙে তার প্রকাশ অনেক বড় বিষয়। এই প্রদর্শনীতে অ্যাবস্ট্রাক্ট নানা চিত্রকর্মের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে মসজিদ, বেড়ালসহ নানা স্থাপনা ও প্রাণীর প্রতিকৃতিও। ‘কালার অব পসিবিলিটিজ’ শীর্ষক এই প্রদর্শনীর আয়োজক সানশাইন লার্নিং সেন্টার। শিল্পীরাও এই প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদে শিক্ষার্থী। গুলশান-২ নম্বরের বে এজ গ্যালারিতে শনিবার দিনভর প্রদর্শিত হয় তাদের চিত্রকর্ম।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। ছবি: দৈনিক বাংলা
অতিথি হিসেবে তাদের চিত্রকর্ম দেখতে এসেছিলেন বাংলাদেশে ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মা, একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট অভিনেত্রী ও এশিয়াটিক ৩৬০-এর চেয়ারপারসন সারা যাকেরসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে রাঈদ তাবরেজ, আরিয়া, আরিশা, কাই, সিরাতসহ বিভিন্ন শিশুর অনেক চিত্রকর্ম।
এই বিশেষ শিশুদের কী করে ছবি আঁকা শেখালেন জানতে চাইলে সানশাইন লার্নিং সেন্টারের আর্ট শিক্ষক নাইমুল হক হৃদয় বলেন, স্বাভাবিক মানুষের মতো বিশেষ শিশুদেরও ছবি দেখতে ও রং-তুলি দিয়ে আঁকতে ভালো লাগে। এটা তাদের অনুভূতি দেখলেই বোঝা যায়। অটিজমে আক্রান্ত সব শিশুর পক্ষে ছবি আঁকা হয়তো সম্ভব নয়, তবে যাদের পক্ষে সম্ভব সেটা আমরা বুঝতে পারি। তেমন কিছু শিশুকে আমি প্রথমে রং, তুলি, ক্যানভাস এগুলো চেনানোর চেষ্টা করি। এরপর তাদের তুলি ধরতে শেখাই। ব্যাপারটা কিন্তু এক দিনে সম্ভব হয়নি। এ জন্য অনেক মাস সময় লেগেছে। এরপর তাদের চেনাই রং। তারা তুলিতে যেকোনো রং মাখিয়ে প্রথম দিকে ইচ্ছা আঁকিবুকি করত। সোজা-বাঁকা-গোল করা এটা তো অনেক পরের ব্যাপার। এরপর তারা ধীরে ধীরে রঙের ওপরে রং করার চেষ্টা করে যায়। কী হচ্ছে তা দেখে আনন্দ পায়। এর মধ্যেই তাদের অনেকে ইচ্ছামতো প্রাণী-পাখি ইত্যাদি আঁকার চেষ্টা করে। এরপর ধীরে ধীরে শিখে গেছে অনেক কিছুই। কেবল বোঝাতে চেষ্টা করেছি যা খুশি আঁক। ক্যানভাসের ভেতর আঁকা, কোন বিষয় ফুটিয়ে তোলা এসব শেখার মাধ্যমে তারা তাদের কল্পনার ছবিগুলো আঁকতে শিখে গেছে।

শিশু রাইদের মা জানান, তার ছেলে ছোটবেলা থেকে আজান দিতে পছন্দ করে। মসজিদ তার প্রিয় বিষয়। সুযোগ পেলেই সে মসজিদের নানা রকম ছবি আঁকে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ শিশুদের নাচ-গানের পরিবেশনাও ছিল মনোমুগ্ধকর।
প্রদর্শনীর শেষবেলা সন্ধ্যায় উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, প্রদর্শনীটি দেখে তিনি রোমাঞ্চিত। ভবিষ্যতেও এ ধরনের উদ্যোগে ডাকলেই তিনি সাড়া দেবেন।
প্রদর্শনীটির পৃষ্ঠপোষকতা করে ঘড়ি বিপণন প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ অ্যান্ড সন্স।