
দেশে চলতি বছরে এক দিনে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগীর রেকর্ড হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৩৮৯ জন। এর আগে এক দিনে এর চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছিল গত বছরের ১৬ নভেম্বর ১ হাজার ৪২৯ জন। গতকালের আগ পর্যন্ত এ বছর দিনে সর্বোচ্চ রোগী ভর্তি হয়েছিল ১০ নভেম্বর ১ হাজার ৩৩৭ জন।
এ নিয়ে এ মাসের গত ১৭ দিনে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৮ হাজার ১৬৭ জনে। এই সংখ্যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রোগীর মাস, গত অক্টোবরের প্রথম ১৭ দিনের চেয়ে ২ হাজার ৫৫ জন বেশি। সে মাসে এ সময় রোগী ছিল ১৬ হাজার ১১২ জন।
গতকাল রবিবার রাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুর তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও আটজন মারা গেছে। এ নিয়ে এই মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু একশতে পৌঁছাল। এই সংখ্যা সর্বোচ্চ মৃত্যুর মাস অক্টোবরের প্রথম ১৭ দিনের চেয়ে ২৯ জন বেশি। সে মাসের প্রথম ১৭ দিনে মৃত্যু ছিল ৭১ জনের।
ডেঙ্গুতে নতুন যে আটজন মারা গেছে, তাদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও চারজন নারী। তাদের সাতজনই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ও একজন চট্টগ্রাম বিভাগে ভর্তি ছিল।
এ নিয়ে এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু দাঁড়াল ৪১৫ জনে। গত মাসের এ সময় পর্যন্ত মৃত্যু ছিল ২৩৪ জনের। অর্থাৎ গত মাসের চেয়ে এ মাসে মৃত্যু দ্বিগুণ।
এ বছর এখন পর্যন্ত নারী ও পুরুষের মৃত্যু প্রায় সমান, যথাক্রমে ২০৮ ও ২০৭ জন। সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৮৩ জনের, যা মোট মৃত্যুর ৪৪ শতাংশ। এরপর ঢাকা উত্তর সিটিতে ৬৯, বরিশাল বিভাগে ৪৭, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪২, ঢাকা বিভাগে ৩২, খুলনা বিভাগে ২১, ময়মনসিংহ বিভাগে ১২, রাজশাহী বিভাগে পাঁচ, রংপুর বিভাগে দুই এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বাইরে একজন করে মারা গেছে।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ৮৯৩ পুরুষ ও ৪৯৬ নারী। এর মধ্যে শূন্য থেকে ১৫ বছর বয়সী ১৬৯ শিশু আছে। এ সময়ে সর্বোচ্চ রোগী ভর্তি হয়েছে ঢাকা বিভাগে ৪১২ জন। এরপর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২০৯, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭২, খুলনা বিভাগে ১৫৯, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৪৬, বরিশাল বিভাগে ১২৩, রাজশাহী বিভাগে ৯৬, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৪, রংপুর বিভাগে ১৯ ও সিলেট বিভাগে ৯ জন ভর্তি হয়েছে।
এ নিয়ে এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৭৯ হাজার ৯৮৪ জন। তাদের মধ্যে ৫০ হাজার ৫০৯ জন বা ৬৩ শতাংশ পুরুষ ও ২৯ হাজার ৪৭৫ জন বা ৩৭ শতাংশ নারী।সর্বোচ্চ রোগী পাওয়া গেছে ঢাকার দুই সিটিতে। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটিতে ভর্তি হয়েছে ১৭ হাজার ৫৬ জন ও উত্তর সিটিতে ১৪ হাজার ৪৮৬ জন।
দেশে ডেঙ্গুর প্রথম প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ২০০০ সালে। সেই থেকে গত ২৪ বছরের ইতিহাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নেয় গত বছর ২০২৩ সালে। সে বছর ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয় ও মারা যায় ১ হাজার ৭০৫ জন। রোগী ও মৃত্যুর এই সংখ্যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল ২০২২ সালে ২৮১ জন। সে বছর রোগী ছিল ৬২ হাজার ৩৮২ জন, যা এ বছরের আগে পর্যন্ত ছিল তৃতীয় সর্বোচ্চ রোগী। কিন্তু এ বছর এরই মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ রোগীর রেকর্ড হয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৭৯ হাজার ছাড়িয়েছে।
এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে। এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৪১৫ জন। এ বছরের আগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল ২০২২ সালে ২৮১ জনের। সেটি এখন তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু।
ডেঙ্গুতে চতুর্থ সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল ২০১৯ সালে ১৭৯ জন ও সে বছর রোগী ছিল এ যাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন।
এরপর ২০২১ সালে ১০৫, ২০০০ সালে ৯৩, ২০০২ সালে ৫৮ ও ২০০১ সালে ৪৪ জন ডেঙ্গুতে মারা যায়। বাকি বছরগুলোর মধ্যে পাঁচ বছর ডেঙ্গুতে কেউ মারা যায়নি এবং অন্য বছরগুলোতে ১-২৬ জনের মধ্যে মৃত্যু ওঠানামা করেছে।