
সাইমন :
নেপালে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাজধানী কাঠমান্ডুর নিকটবর্তী এলাকায় সাবেক এক প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে উত্তেজিত ছাত্র-জনতা।
চোখের সামনে দেখা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরের পর থেকেই শত শত বিক্ষুব্ধ ছাত্র ও সাধারণ মানুষ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও দুর্নীতির প্রতিবাদে রাজধানীতে সমবেত হয়। এক পর্যায়ে তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। বিক্ষোভকারীরা দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ব্যর্থ শাসনের অভিযোগ তুলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে।
হঠাৎ করেই জনতার একাংশ ভাঙচুর শুরু করে এবং মুহূর্তের মধ্যে তারা বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনের লেলিহান শিখা দ্রুত পুরো ভবনজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর একাধিক ইউনিট ঘটনাস্থলে ছুটে যায় এবং ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ততক্ষণে বাসভবনের বড় অংশ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এখনও পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি, তবে কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী ও বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল সূত্র।
পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষও হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জ চালায়। এতে চারপাশের পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
নেপালে গত কয়েক মাস ধরেই ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে অসন্তোষ জমছিল। ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে এই আন্দোলন এখন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, যা জনঅসন্তোষ আরও বাড়িয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অগ্নিকাণ্ড শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং এটি দেশের গভীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিফলন। যদি পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তবে নেপাল আরও বড় অস্থিরতার দিকে ধাবিত হতে পারে।
এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। নেপালে অবস্থানরত বিভিন্ন দূতাবাস নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলেছে এবং অপ্রয়োজনে বাইরে না বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। জাতিসংঘের স্থানীয় কার্যালয়ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।