
জাটকা সংরক্ষণ ও মা-ইলিশ রক্ষায় গত ১৩ অক্টোবর থেকে আজ ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার। তাই আজ রোববার মধ্যরাতে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা শেষে নদী-সাগরে ট্রলার, নৌকা ভাসিয়ে আবারও মাছধরা শুরু করবেন জেলেরা। এ জন্য শেষ সময়ের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
খবর নিয়ে জানা যায়, জেলেদের মধ্যে কেউ ট্রলার মেরামত করছেন, কেউ ট্রলারে রং করছেন, কেউ ট্রলার ধোয়ামোছা করছেন, আবার কেউবা ট্রলারে জালসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম তুলছেন। সমুদ্র যাত্রার প্রস্তুতিতে উপকূলের জেলেরা এ ব্যস্ত সময় পার করছেন। জেলেসহ মৎস্যসংশ্লিষ্টরা এখন মাছ ধরার স্বপ্নে বিভোর। তাদের আশা, এবার তাদের জালে ধরা পড়বে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, ইতোমধ্যে প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বরগুনার জেলেরা নিষেধাজ্ঞা মেনেছেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে যাবেন তারা। জেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হাসিবুল হক জানান, জেলেরা নিষেধাজ্ঞা মেনেছেন। সরকারের বরাদ্দ অনুযায়ী প্রত্যেক জেলেকে ২৫ কেজি করে ভিজিএফের চাল সহায়তা দেয়া হয়েছে। জেলেদের বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। ইলিশের বাধাহীন প্রজননের জন্য ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সাগর ও নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। এ সময় সামুদ্রিক মাছ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ ছিল। ২২ দিনের অবরোধ সফল করতে তৎপর ছিল মৎস্য বিভাগ সহ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও। যারা এই সময়ের মধ্যে মাছ ধরতে গিয়েছে তাদের অনেক জেলেকে সাগর ও নদীতে অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও কারাদণ্ড দিয়েছে মৎস্য বিভাগ।
রাঙ্গবালী উপজেলার মৌডুবী এলাকার জেলে সোহেল মিয়া বলেন, অবরোধ মেনে আমরা এই ২২ দিন কর্মহীন সময় পার করেছি। এ নিষেধাজ্ঞার সময় আমাদের মাত্র ২৫ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। পরিবারের ৫ জন্য সদস্যের এই চালে কিছুই হয়নি। তাই এই ২২ দিনে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার মতো দেনায় পড়েছি। সাগরে মাছ পেলে আশা করছি পেছনের ধার দেনা কাটিয়ে উঠতে পারব। মহিপুরের জেলে ইয়াসিন হোসেন বলেন, আমি ৭ থেকে ৮ বছর পর্যন্ত জেলের পেশায় আছি। কিন্তু সরকারি প্রণোদনার তালিকায় আমার নাম নেই। যারা অন্য পেশায় জড়িত দেখেছি তারা সরকারি চাল পেয়েছে। আগামীকাল (রোববার) রাতে আমরা গভীর সাগরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করব। তাই ট্রলারে জাল ও বরফসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম তুলছি। গতকাল আমাদের ট্রলারের রং করার কাজ শেষ হয়েছে।
এদিকে কলাপাড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, কলাপাড়ার নিবন্ধিত ১৮ হাজার ৩০৭ জন জেলেকে ২৫ কেজি করে সরকারি প্রণোদনার চাল দেওয়া হয়েছে। অবরোধ শতভাগ সফল করতে সাগর ও নদীতে উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, নৌ-পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও নৌ-বাহিনী ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করেছেন। আমরা আশা করছি, জেলেরা প্রচুর পরিমাণে ইলিশ পাবেন। তাদের ধারদেনাসহ পেছনের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন।