
কান বলতে আমরা যা বুঝি, মাছের শরীরের বাইরের এমন তেমন কিছু নেই। তবে মাছেরও শোনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আছে। সেটা তাদের পরিবেশের শব্দ ও কম্পন বুঝতে সাহায্য করে।
শোনার জন্য মাছের শরীরে দুই ধরনের ব্যবস্থা আছে।
একটা হলো ইনার এয়ার বা অন্তর্কর্ণ। এটা তাদের মাথার ভেতরে থাকে। অন্তর্কর্ণে ছোট ছোট ক্যালসিয়ামের পাথর থাকে। এগুলোকে বলে অটোলিথ।
পানিতে কোন শব্দ সৃষ্টি হলে সেই শব্দ অটোলিথে কম্পন সৃষ্টি করে। সেই কম্পনের ধরনানুযায়ী মাছ শব্দের মানে বুঝতে পারে। যদিও মানুষের মতো করে শব্দের মানে বোঝা মাছের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু কোনটা স্বস্তিদায়ক, কোনট ভীতিকর, কোনটা শত্রুর উপস্থিতি নির্দেশ করে—সেগুলো ঠিকই বুঝতে পারে।
মাছের শব্দ শোনার দ্বিতীয় ব্যবস্থাটা হলো সাইড লাইন সিস্টেম বা ল্যাটারাল লাইন সিস্টেম। মাছের দেহের দুই পাশে একটি সরল রেখার মতো গঠন থাকে। সেটাই হেলো ল্যাটারাল লাইন সিস্টেম। এ ব্যবস্থা অনেকটা স্নায়ু এবং ছোট ছোট সংবেদনশীল কোষের সমন্বয়ে তৈরি। এর মাধ্যমে মাছ আশপাশের পানির কম্পন বুঝতে পারে।
ধরুন, যদি কোনো শিকার বা বড় মাছ আশপাশে চলে আসে, তাহলে তার চলাফেরার কম্পন মাছের ল্যাটারাল লাইনের সাহায্যে অনুভব করতে পারে। সে বিপদের সংকেত পায়। নিজের খাদ্য বা শিকারের সন্ধানও এভাবে পায় মাছ।
মানুষের তুলনায় মাছের শোনার ক্ষমতা কিছুটা সীমিত। তবে প্রয়োজনীয় শব্দ এবং কম্পন বুঝতে পারে। মাছেরা নিম্ন কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে বেশি দক্ষ। আসলে পানির ঘনত্ব বাতাসের চেয়ে অনেক বেশি। তাই পানির ভেতর উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ বেশি দূর পর্যন্ত পৌঁছায় না।
শিকারের হাত থেকে বাঁচা বা নিচের খাদ্য সম্পর্কে ধারণা এই দুই ব্যবস্থার মাধ্যমে মাছ ধারণা করতে পারে। তেমনি যেসব মাছ দলবদ্ধভাবে বাস করে, তারা সঙ্গীদের সঙ্গে যোগযোগ করতে পারে এই প্রক্রিয়ায়।
অর্থাৎ, মানুষ বা অন্য প্রাণীর মতো মাছের কান থাকলেও, অন্তর্কর্ণ ও ল্যাটারাল লাইন সিস্টেমের মাধ্যমে মাছেরা ঠিকই নিজেদের কাণের প্রয়োজন মেটাতে পারে।
সূত্র: হাউ ইট ওয়ার্কস