
পটুয়াখালীর দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন করে ওই স্কুল মাঠে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল হক নুরের জনসভা হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
আজ বুধবার বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে হয় এই সভা। গণ অধিকার পরিষদের উপজেলা শাখার আহ্বায়ক মো. লিয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন নুরুল হক নুর।
নুরুল হক নুর বলেন, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী যারা আছেন সকলেই জনগণের জন্য কাজ করবেন। একটা কথা মনে রাখবেন, এখন কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় নাই। কাজেই আওয়ামী লীগের মত থানায় গিয়ে পায়ের ওপর পা ঝুলিয়ে ওসির সঙ্গে গাল গপ্প করা, ইউএনওর সঙ্গে গাল গপ্প করা, তাদের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা, এগুলো কোনো রাজনৈতিক দল এখন করতে পারবে না। এখন অন্তবর্তী সরকার। ওসি হোক, ডিসি হোক, ইউএনও হোক বা এসপি হোক যারা জনগণের জন্য কাজ করবে না, তাদের চাকরিচ্যুত করা হবে।
এ সময় তিনি বলেন, আমরা দেখেছি গত ১৫ বছরে সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী ও প্রশাসনে কীভাবে দলীয়করণ করা হয়েছিল। আমি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই আপনারা যদি কোনো রাজনৈতিক দলের গোলামি করেন তাহলে প্রজাতন্ত্রের চাকরি করতে পারবেন না।
এ সময় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৩ (দশমিনা-গলাচিপা) সংসদীয় আসনে নির্বাচন করার ঘোষণাও দেন ডাকসুর সাবেক এই ভিপি।
জনসভায় দশমিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরতিজা হাসানকে বলেন আপনার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। আমি দেখবো, সত্যতা পেলে এখান থাকে বিতারিত করব।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ অক্টোবর বিদ্যালয়টির দশম শ্রেণির সাধারণ ও কারিগরি শাখার শিক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা শুরু হয়। সময় সূচিতে উল্লেখিত তারিখগুলোয় প্রতিদিন বেলা দেড়টায় শুরু হয়ে সাড়ে ৪ টায় পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা। এ পরীক্ষা আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে বলে বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, ওই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আজ বুধবারের (৩০ অক্টোবর) বিকেল দেড়টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের পরীক্ষাটি এগিয়ে সকাল ১০টায় শুরু করে বেলা ১ টায় শেষ করেছে।
মামুন মৃধা নামে একজন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেন, ‘রাজনৈতিক দলের জনসভার জন্য পরীক্ষার সময় পরিবর্তন করায় অসন্তোষ বিরাজ করছে কোমলমতি পরীক্ষার্থী ও অভিভাকদের মধ্যে।’
আবু আব্দুল্লাহ নামে একজন লিখেছেন, ‘এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। পরীক্ষার সময় পরিবর্তন করে জনসভার অনুমতি পায় কি করে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সালাউদ্দিন সৈকত মোবাইলে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গণ অধিকার পরিষদের জনসভার কারণে পরীক্ষা সকাল ১০টায় আনছি। ইউএনও স্যার পারমিশন দিয়েছেন, তাই আমিও পারমিশন দিয়েছি।’
গণ অধিকার পরিষদের দশমিনা উপজেলা শাখার আহবায়ক মো. লিয়ার হোসেন বলেন, ‘পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। জনসভার অনুমতি দিয়েছেন দশমিনার ইউএনও।’
জানতে চাইলে দশমিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইরতিজা হাসান মুঠোফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পারমিশনের কপিগুলো কোথায়, একটু দেখাইতে বলেন। কোনো পারমিশনই তাদেরকে দেওয়া হয়নি। জনসভার পারমিশনতো ডিসি মহোদয়ের অফিস থেকে দেবে। জনসভার বিষয়ে পারমিশন আমার এখানে দেওয়ার নাই। আর স্কুল কম্পাউন্ডের ভেতরে যে তারা প্রোগ্রাম করছে সেই বিষয়ে তো আমার কাছ থেকে পারমিশন কেউই নেয়নি। না স্কুল কর্তৃপক্ষ, না ওনারা। ওনারা জনসভার পারমিশনের আবেদন ডিসি স্যারের কাছে দিয়েছে। ডিসি স্যার সেটা এসপি মহোদয়কে দিয়েছেন। এসপি মহোদয় সেটা থানার ওসিকে দিয়েছেন। থানার ওসি সেটা তদন্ত করে তাদের অফিশিয়াল রিপোর্ট করেছে। এটা হচ্ছে সেই মাধ্যম। এটা আমার কাছে তারা জাস্ট একটা অনুলিপি দিয়েছে। এখানে আমাদের লিখিতভাবে কোনো অনুমতি দেয়ার সুযোগই নাই। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান এখন পর্যন্ত কোনো বিষয়ই আমার সঙ্গে শেয়ার করেননি। উনি তার নিজের ডিসিশন মত এই বিষয়গুলো করেছেন। এ বিষয়গুলো উল্লেখ করে আমি ব্যবস্থা নেব।