
দেশের প্রত্নসম্পদ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা ও সংরক্ষণ এবং দখল ও বেহাত হওয়া ঠেকাতে নতুন অধ্যাদেশ করতে যাচ্ছে সরকার। ‘প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অধ্যাদেশটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। এ ছাড়া ‘জাতীয় সংসদ সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন এবং সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমার বিষয়টি আবার পর্যালোচনার জন্য তোলা হতে পারে।
সূত্র জানায়, প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ অধ্যাদেশের খসড়ায় প্রত্নসম্পদকে ‘অমূল্য’ আখ্যা দিয়ে এর ক্ষতিসাধন, ধ্বংস, ভাঙা, বিনষ্ট, পরিবর্তন করলে ১০ বছর কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রত্নসম্পদের পাচার রোধে সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো প্রত্নসম্পদ প্রদর্শনী ও গবেষণার স্বার্থে পরীক্ষার জন্য দেশের বাইরে পাঠানো যাবে না। এর ব্যত্যয় হলে শুল্ক আইনের আওতায় চোরাচালান হিসেবে গণ্য হবে।
এই বিধান অমান্যকারী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত হলেও সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
প্রত্নসম্পদ রক্ষায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অধিযাচন (ফরমায়েশপত্র) সাপেক্ষে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে। তাতে পুরাকীর্তির ব্যবসা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধের বিধান এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে পুরাকীর্তির অনুকৃতির ব্যবসার অনুমোদন দেওয়া হবে। এ ছাড়া নতুন আইনে স্থাবর প্রত্নসম্পদের সর্বোচ্চ সুরক্ষিত এলাকা বা প্রপার্টি জোন ও বিশেষ সুরক্ষিত এলাকা সুনির্দিষ্ট থাকবে।
বিশেষ সুরক্ষিত এলাকায় কোনো বহুতল ভবন নির্মাণ, ইটভাটা, কলকারখানা স্থাপন, ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান, রাস্তা নির্মাণ করা যাবে না। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া কোনো খনন করা যাবে না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিদ্যমান আইনটি ১৯৭৬ সালে সংশোধন করা হয়েছিল। পুরাকীর্তি রক্ষা ও সংরক্ষণের তিনটি আইন আছে—ট্রেজারার্স ট্রুভ অ্যাক্ট ১৮৭৮, অ্যানসিয়েন্ট মনুমেন্ট প্রিজারভেশন অ্যাক্ট ১৯০৪ ও অ্যান্টিকুইটিজ অ্যাক্ট ১৯৪৭। ব্রিটিশ শাসনামলে প্রণীত এই তিন আইন এখনো বহাল আছে।
অপরাধের ধরন পাল্টে গেছে। প্রত্ন ও সাংস্কৃতিক সম্পদ এখন নানাভাবে ও নানা কৌশলে লুট করা হচ্ছে। কালেভদ্রে এই চোরেরা ধরা পড়ে। কঠিন আইন না থাকায় তারা পার পেয়ে যায়।
এ ছাড়া ‘জাতীয় সংসদ সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে সরকার। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়। ২ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। এর আগে ১৫ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে গ্রেপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। ফলে জাতীয় সংসদের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যমান আইনে ‘ক্রান্তিকালীন বিশেষ বিধান’ নামে নতুন ধারা যোগ করে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ ভঙ্গ থাকলে এবং ভঙ্গকালে সংসদের স্পিকার সংবিধানের ৭৪(২)(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ করলে এবং রাষ্ট্রপতি পদত্যাগপত্র গ্রহণ করলে ও সংসদ সচিবালয় কমিশন বিদ্যমান বা বলবৎ না থাকলে, সংসদে স্পিকার নির্বাচন ও কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত সংসদ সচিবালয় আইন এবং এর অধীন প্রণীত বিধিমালা ও নীতিমালাগুলোতে সব ধরনের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টার ওপর ন্যস্ত হবে। আগে এই ক্ষমতা স্পিকারের ছিল।
এ ছাড়া গত ২৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয় সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায়। কিন্তু এখনো এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে কিছুটা মতভিন্নতা রয়েছে। আজকের বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এপর প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।