
অনলাইন জুয়া ডেকে আনছে সর্বনাশ! অন্ধকার জগতের ভয়ংকর ফাঁদ উন্মোচিত
অনলাইন ডেস্ক | ইঞ্জিঃ মোঃ নাসির বিন আরেফিন
বিনোদনের নামে ছড়িয়ে পড়া এক ভয়াবহ আসক্তি—অনলাইন জুয়া আজকের তরুণ সমাজকে ঠেলে দিচ্ছে ধ্বংসের পথে। আদালতের নজরদারিতে প্রকাশ পাচ্ছে এর বিপর্যয়কর দিক।

একটি নিরীহ মোবাইল অ্যাপ কিংবা ওয়েবসাইট—সেই মাধ্যমেই শুরু হয় সর্বনাশের গল্প। “মজা করে খেলা”, “লাভ করার সুযোগ” বা “রিওয়ার্ড জেতার গ্যারান্টি” দিয়ে লাখো তরুণ-তরুণীকে টেনে আনা হয় অনলাইন জুয়ার জগতে। কিন্তু একবার প্রবেশ করলেই বের হওয়া কঠিন।
এই অনলাইন জুয়া প্রথমে বিনামূল্যে খেলার সুযোগ দেয়, তারপর ধীরে ধীরে টাকা ইনভেস্ট করে “আরও জেতার” প্রলোভন দেখায়। কেউ কিছুটা সময়ের জন্য জিতলেও, শেষ পর্যন্ত হারায় সবকিছু—টাকা, সময়, মনোবল, এমনকি পরিবারও।
ভয়াবহ পরিসংখ্যান
সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে আনুমানিক ৫০ লাখের বেশি মানুষ কোনো না কোনোভাবে অনলাইন জুয়ার সঙ্গে যুক্ত। মোবাইল গেম, লাকি ড্র, স্পিন হুইল, কিংবা লাইভ ব্যেটিং-এর মতো নানা কৌশলে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা খরচ করছেন ব্যবহারকারীরা।
বাস্তব কাহিনি
এক কলেজছাত্র জানায়:
“শুরুতে ১০০ টাকা দিয়েছিলাম। কয়েকবার জিতে গেলেও পরে সব হারিয়ে ফেলি। এখন প্রায় ১৫ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে বন্ধুবান্ধবের কাছে।”
আরেক চাকরিজীবী বলেন:
“এক সময় মনে হতো আমি কন্ট্রোল করতে পারি, কিন্তু পরে বুঝলাম এটা একটা নেশা। নিজের জীবনটাই এলোমেলো হয়ে গেল।”

প্রযুক্তি ও আইন ভেদ করে ছড়িয়ে পড়ছে
অনলাইন জুয়ার এপস ও ওয়েবসাইটগুলো সাধারণত দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত হয়। VPN ও অননুমোদিত লেনদেন পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সহজেই এইসব প্ল্যাটফর্মে ঢুকে পড়ছে। মোবাইল ব্যাংকিং, ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড ও গিফট কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সহজেই অর্থ লেনদেন সম্ভব হয়ে উঠেছে।
আদালতের হস্তক্ষেপ
দেশের উচ্চ আদালত সম্প্রতি একাধিক রিটের প্রেক্ষিতে সরকারকে অনলাইন জুয়া ও এর বিজ্ঞাপন বন্ধে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত মনে করছে, এটি শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতির নয়, বরং সামাজিক নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার জন্যও হুমকি।

কেন ভয়ংকর এই আসক্তি?
সমস্যা | প্রভাব |
অনিয়ন্ত্রিত অ্যাক্সেস | ২৪/৭ যেকোনো সময় খেলা সম্ভব |
তরুণদের দুর্বলতা | সহজে প্রলুব্ধ হওয়া ও আত্মবিশ্বাস হারানো |
অর্থনৈতিক বিপর্যয় | পারিবারিক সংকট, ঋণগ্রস্ততা |
মানসিক স্বাস্থ্য | হতাশা, উদ্বেগ, আত্মহত্যার ঝুঁকি |
করণীয়
- সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ
- পরিবারে খোলামেলা আলোচনা
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক সেমিনার ও ওয়ার্কশপ
- সরকারের প্রযুক্তিগত মনিটরিং ও আইনি ব্যাবস্থা জোরদার করা
- গুগল/প্লে স্টোরে অবৈধ গেমিং এপস ব্যান করা
অনলাইন জুয়া নিঃশব্দ এক সর্বনাশ। বিনোদনের মুখোশে মোড়ানো এই দানব ইতোমধ্যে হাজারো পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকার। তরুণ সমাজকে বাঁচাতে হলে এখনই নিতে হবে সামাজিক, প্রযুক্তিগত ও আইনি সম্মিলিত উদ্যোগ।