
জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা না হলে ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন অব্যাহত থাকলে। নতুন এক গবেষণায় এমন আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যদি বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প বিপ্লবের গড় তাপমাত্রার তুলনায় ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বৃদ্ধি পায়, প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে প্রজাতির বিলুপ্তির হার দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। বিশেষত উভচর প্রাণী, পাহাড়, দ্বীপ এবং বিশুদ্ধ পানির বাস্তুসংস্থানগুলোতে, এবং দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের প্রজাতি বিলুপ্ত বেশি হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাতের ধরণে পরিবর্তন আসে। আবাসস্থল ও প্রজাতিগুলোর দৈনন্দিন জীবন পরিবর্তন হয়।
কিছু প্রজাতি কঠোর পরিবেশগত পরিবর্তনগুলো থেকে বাঁচতে পারে না, যার ফলে প্রজাতির জনসংখ্যা হ্রাস পায় এবং কখনো কখনো বিলুপ্ত হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত নতুন গবেষণাটি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জীববৈচিত্র্য এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্লেষণ করেছে। বেশিরভাগ পরিচিত প্রজাতি গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এতে বলা হয়, যদি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো না যায় বিশ্বব্যাপী বহু প্রজাতির মধ্যে আনুমানিক ১ লাখ ৮০ হাজার প্রজাতি ২০২১ সালের মধ্যে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকবে।
কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী মার্ক আরবান লাইভ সায়েন্সকে বলেন, ঝুঁকিতে থাকা প্রজাতির সংখ্যা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।
আরবান বলেন, আমরা যদি প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখি, তাহলে বিলুপ্তির ঝুঁকি তেমন আসবে না। কিন্তু ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বিলুপ্তির গতিপথ ত্বরান্বিত হবে। দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের প্রজাতিগুলো সবচেয়ে বড় হুমকির মুখোমুখি।
উভচর প্রাণীরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে রয়েছে। কেননা উভচরদের জীবনচক্র আবহাওয়ার উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে এবং বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তন ও খরার জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল। পর্বত, দ্বীপ এবং মিঠা পানির বাস্তুতন্ত্রেও সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ প্রজাতি রয়েছে। বিচ্ছিন্ন পরিবেশ তাদের প্রজাতির জন্য প্রতিকূল। তাদের পক্ষে স্থানান্তর এবং আরও অনুকূল জলবায়ু সন্ধান করা কঠিন বা অসম্ভব হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ধীর করতে পারে। সেই সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বিলুপ্তির ঝুঁকি থামাতে পারে।
আরবান আশা করছেন, গবেষণার ফলাফলগুলো বৈশ্বিক নীতিনির্ধারকদের ওপর প্রভাব ফেলবে। নীতিনির্ধারকদের জন্য মূল বার্তা হলো, এটি সম্পর্কে আরও বেশি নিশ্চিত করা।