
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসররা এখনো দেশকে অস্থিতিশীল করতে উসকানি দিচ্ছে। তবে সেই ফাঁদে কোনোভাবেই পা দেওয়া যাবে না। যতই ষড়যন্ত্র হোক তা ব্যর্থ করতে হবে।
গতকাল রবিবার সকালে খুলনার খানজাহান আলী থানা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে স্থানীয় ইস্টার্ন জুট মিলস শ্রমিক ময়দানে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জামায়াতে ইসলামীর আমির এসব কথা বলেন।
থানা জামায়াতের আমির সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটোর সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদ মামুনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসাইন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ ছিল হিংসুক, সংকীর্ণমনা, বেদরদি ও বেপরোয়া। তারা না আল্লাহকে ভয় করেছে, না মানুষকে সম্মান ও সমীহ করেছে। তাদের আমলে সারা বাংলাদেশে কাঁড়ি কাঁড়ি লাশ আর ছোপ ছোপ রক্ত ছিল।
এ জন্য দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে এ দেশের ছাত্র-জনতা ন্যায়বিচারের স্লোগান নিয়ে রাজপথে নেমেছিল। এই প্রজন্মের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যৎ উপহার দিতে জামায়াতের প্রতিটি কর্মীকে কাজ করতে হবে।
প্রধান অতিথি জামায়াতের আমির আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার মাধ্যমে লাশের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় আসে। তারা ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে খুনের পর আলো বন্ধ করে হত্যাকারীদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছিল।
তারা ঠাণ্ডা মাথায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে সাজানো সাক্ষী আর পাতানো কোর্ট দিয়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করেছে।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, এ অঞ্চলের প্রধান দুটি বিষয় হলো মিল ও বিল। আওয়ামী লীগ আমলে এ অঞ্চলের ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে শ্রমিকদের বেকার করা হয়েছে। বিল ডাকাতিয়াসহ বিভিন্ন জলাশয় দখল ও স্লইসগেট বন্ধ করে হাজার হাজার মানুষকে পানিবন্দি করে রাখা হয়েছে। প্রশাসনের দুর্নীতির কারণে মিলগুলোর লোকসান হলেও তার দায়ভার চাপানো হয়েছে শ্রমিকদের ওপর।
এ সময় জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও ডুমুরিয়া হিন্দু কমিটির নেতা কৃষ্ণা নন্দীও বক্তৃতা করেন। ইসকন নেতা চিন্ময় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার সঙ্গে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় থাকবে না।
এর আগে খুলনা মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগের উদ্যোগে নগরীর আল ফারুক সোসাইটিতে মহিলা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন জামায়াতের আমির। মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি শামসুন নাহার এতে সভাপতিত্ব করেন।
তাদের ভাগ্য বদল হয়েছে, সর্বনাশ হয়েছে জাতির
খুলনা থেকে ফেরার পথে নড়াইলের মালিবাগ মোড়ে পথসভায় জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘যারা জাতির ভাগ্য বদলের কথা বলেছেন, দিনশেষে তাদেরই ভাগ্য বদল হয়েছে, সর্বনাশ হয়েছে জাতির।’
নতুন বাংলাদেশ গড়া প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে দল-ধর্ম-নারী-পুরুষ সবাই মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারে, পুরুষের পাশাপাশি নারী তার বাড়িতে-কর্মস্থলে নিরাপত্তার সঙ্গে কাজ করতে পারে।’
নড়াইলে নেতাকে স্বাগত জানান জেলা জামায়াতের আমির অ্যাড. আতাউর রহমান বাচ্চু, নায়েবে আমির জাকির হোসেন, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ কায়সার প্রমুখ।
আ. লীগ ১৮ কোটি মানুষকে ভাড়াটিয়া মনে করত
বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতাদের কথায় মনে হতো ২০৪১ সাল পর্যন্ত তারা দেশের লিজ নিয়েছে। তারা নিজেদের দেশের মালিক আর ১৮ কোটি মানুষকে দেশের ভাড়াটিয়া মনে করত।
গতকাল বিকেলে ফরিদপুরে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি কথাগুলো বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩৯ জন মানুষকে লগি-বৈঠা দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিল আওয়ামী লীগ। যাদের কারণে দেশ ফিরে পেয়েছি, আমাদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা সেই ছাত্র-জনতার জন্য। আমরা তাদের স্যালুট জানাই।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার বাড়ি ছিল ফরিদপুরে। তাদের অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে বিচারিক আদালতে খুন করা হয়েছে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।’
ফরিদপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মুহাম্মদ বদরুদ্দীনের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক এমপি ও ফরিদপুর অঞ্চলের পরিচালক এ এইচ এম হামিদুর রহমান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও অঞ্চল সহকারী পরিচালক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।