
সম্প্রতি আমরা দেখতে পাচ্ছি, শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা। যেখান থেকে তৈরি হচ্ছে অরাজকতা। এ পরিস্থিতিতে তিনটি বিষয় আমাদের মনে রাখা দরকার। যে লক্ষ্য নিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে জুলাই-আগস্টে আন্দোলন হয়েছিল, সেটার ফলে যারা নীতিনির্ধারণী ভূমিকায় এসেছেন, তাদের কাজগুলো করার ক্ষেত্রে একটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় হচ্ছে, এর মাধ্যমে যদি অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়, তাহলে এ ব্যাপারে নীতিনির্ধারকদের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
তৃতীয়ত, একজন শিক্ষাকর্মী হিসেবে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি যেটি চিন্তার বিষয়, আমাদের শিক্ষার্থীদের এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকার কথা। অথচ তুচ্ছ কারণে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে ভাঙচুর করছে। এগুলো তো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।
এখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে একটা কড়া সিগন্যাল যেতে হবে, এগুলো সহ্য করা হবে না। আমরা দেখেছি, এইচএসসিতে বৈষম্যহীন ফলাফলের দাবিতে কিছু শিক্ষার্থী যখন উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করছিল, তখন সরকার কিন্তু একটা ব্যবস্থা নিয়েছিল।
রাস্তায় নামার অধিকার সবার আছে। কিন্তু সেটার কারণে জনদুর্ভোগ তৈরি করা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আমি মনে করি, আমাদের সমন্বয়কদের পক্ষ থেকেও কড়া বার্তা দেওয়া উচিত—এসব কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষার্থীদের এই মুহূর্তে প্রয়োজন নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করা। কোথাও যদি কোনো ঘটনা ঘটে থাকে এবং সেখানে যদি শিক্ষার্থীরা ভিকটিম হয়, সেটার জন্য তো দেশে আইন-কানুন আছে। তারা তো আইন-কানুনকে সমীহ করতে পারত। এটা তো স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম না।
সেই জায়গাটা থেকে তারা সরে গেল কি না সেটাও দেখতে হবে। আবার এটা এমনও হতে পারে, কোনো স্বার্থান্বেষী মহল অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য তাদের কাজে লাগাচ্ছে। এটা দেখার দায়িত্ব অবশ্যই নীতিনির্ধারকদের।
আমরা সাত কলেজ, তিতুমীর কলেজের আন্দোলন দেখলাম, সেখানে প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের দায়িত্ব ছিল। শুরুতেই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। এটাকে বিস্ফোরণ ঘটার আগেই প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের বড় ভূমিকা নেওয়া উচিত ছিল।
শিক্ষার্থীদের বুঝতে হবে, এটা স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন না, এটা কোনো জাতীয় ইস্যু না। এখন কোন প্রতিষ্ঠান কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকবে বা আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় হবে এটা তো সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের দায়িত্ব।
ডেঙ্গুতে একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে এই ইস্যুতে যেটা হলো তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। চিকিৎসকদের যদি অবহেলা থাকে, শিক্ষার্থীরা তো উচ্চ পর্যায়ে জানাতে পারত। সেদিনও তো দেখলাম, একজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই ভাঙচুরের কী কারণ তা খুঁজে বের করে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া উচিত।
আরেকটা ব্যাপার স্বীকার করতে হবে, শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে, শিক্ষার্থীদের জন্য ট্রমা কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা। মাসে অন্তত এক দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচিত শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের নিয়ে বসা। এটা কিন্তু সারা বিশ্বে আছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় বলতে গেলে, শিক্ষার্থীদের অবশ্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে হবে। আর যে বা যারা অপরাধ করুক, মেডিক্যাল কিংবা শিক্ষার্থী বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সেটি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। আর শিক্ষার্থীদের জন্য এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, তারা যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকে,শিক্ষার্থীরা যেন লেখাপড়াটা করে। নয়তো আমরা জাতি হিসেবে পিছিয়ে পড়ব।