
একের পর এক ম্যাচ হেরেই চলেছেন পেপ গার্দিওলা।‘আমাদের এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে এবং এখান থেকে বেরোতে হবে’—ভারী কণ্ঠে পেপ গার্দিওলার বলা এই কথায় বলে দিচ্ছিল সবকিছু। এই সাধারণ সত্যটা বলতে হয়তো বুক ফেটে যাচ্ছিল ম্যানচেস্টার সিটি কোচের। একটু আগে যেটি হয়েছে, তার জন্য যে মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না তিনি!
সিটির সঙ্গে ২ বছরের চুক্তি নবায়নের ৪৮ ঘণ্টা না যেতেই গার্দিওলার জন্য পরশুর রাতটি এমন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে কে জানত! আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার প্রথম ম্যাচেই টটেনহামের হাতে বিধ্বস্ত হতে হয়েছে সিটিজেনদের। সেটিও নিজেদের মাঠ ইতিহাদে! এ নিয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ৫ ম্যাচে হারল প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়নরা। ২০০৬ সালের পর এমনটা এবারই প্রথম ঘটল সিটির সঙ্গে।
আর গার্দিওলার সঙ্গে? বিরতিতে যাওয়ার আগে কোচিং ক্যারিয়ারে প্রথমবার পেয়েছিলেন টানা চার ম্যাচে হারের তিক্ত স্বাদ। ফিরে আবারও হেরে সংবাদ সম্মেলনে এসে বললেন, ‘৪-০ গোলে হারের পর বেশি কিছু বলার থাকে না।’ হারলেও স্পার্সদের অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি। আর প্রথমার্ধে জোড়া গোলে টটেনহামের জয়ের নায়ক জেমস ম্যাডিসন।
গত মাসের শেষ দিনে কারাবো কাপে স্পার্সদের মাঠে হারের পর জয়খরা শুরু সিটির। এবার তো ইতিহাদে টানা ৫২ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ডটিও খোয়াল তারা। টটেনহামের লন্ডন প্রতিদ্বন্দ্বী আর্সেনালের বিপক্ষে ২০০৩ সালে ৫-১ গোলে হেরেছিল সিটিজেনরা। এরপর নিজেদের মাটিতে এটিই সবচেয়ে বাজে হার ক্লাবটির।
সিটিকে রেকর্ড টানা চার লিগ শিরোপা জেতানো গার্দিওলার জাদু কি তবে শেষ হতে চলল? সেই আলোচনা যে চলছে না, এমন নয়। ২০১৬ থেকে ইতিহাদে তিনি। গত ৮ বছরে এমন কঠিন পরিস্থিতিতে গার্দিওলা আগে পড়েননি। সেই কারণে হতাশাটাও বেশি তাঁর, ‘৮ বছরে এমনটা কখনো ঘটেনি।’ গার্দিওলার অধীনে প্রিমিয়ার লিগে প্রথমবার টানা ৩ ম্যাচ হারলেও ২৩ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দুইয়ে সিটি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নবাণ যতই তীক্ষ্ণ হচ্ছিল, পেপ গার্দিওলার কপালের ভাঁজগুলো স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছিল। একটু আগে ইতিহাদে যে বিব্রতকর ঘটনার সাক্ষী হয়ে এসেছেন, সেটাই যেন ক্রমেই ফুটে উঠছিল গার্দিওলার কপালে। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচে হার। অবিশ্বাস্য! এই অবিশ্বাস দল হিসেবে ম্যানচেস্টার সিটির জন্য যতটা সত্য, একইভাবে গার্দিওলার জন্যও।
সিটির এমন দুর্দশার জন্য দায়ী করা হচ্ছে দলে একের পর এক চোটকে। বিশেষ করে দলের অন্যতম সেরা তারকা ও ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রদ্রির চোটকেই সামনে আনা হচ্ছে বারবার। কিন্তু শুধু চোটকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোই হয়তো সবটা বলে না। কারণ, প্রতি মৌসুমেই এমন একটা সময় আসে, যখন চোট হানা দেয়। দল সেরা অবস্থায় থাকে না।
কিন্তু এরপরও নিজেদের টিকিয়ে রাখার উপায়টা ঠিকই বের করে নেন গার্দিওলা এবং পাশার দান উল্টে বাজিমাতও করেন। কিন্তু এবার সিটির খেলার ধরন, শরীরী ভাষা থেকে শুরু করে কৌশলগত জায়গাগুলোও কেমন যেন মলিন হয়ে গেছে। রক্ষণে সেই দৃঢ়তা যেমন নেই, আক্রমণভাগের তীব্রতাও কমে গেছে। আর সবচেয়ে বড় কথা, গার্দিওলার জাদুর ছড়িও আর স্পর্শেই বদলে দিতে পারছে না ম্যাচের রং।