
মোঃ শিহাব উদ্দিন, দৈনিক জনজাগরণ
ডেঙ্গু জ্বর আমাদের দেশে একটি নিয়মিত স্বাস্থ্যঝুঁকি হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়, যার ফলে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য একটি বহুমুখী উদ্যোগ প্রয়োজন, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা, জনসচেতনতা, এবং সরকারি কার্যক্রম একত্রে কাজ করবে।
সমস্যার মূল কারণ বোঝা
ডেঙ্গু এডিস ইজিপ্টাই মশার মাধ্যমে সংক্রামিত হয়, যা উষ্ণ এবং আর্দ্র জলবায়ুতে বংশবিস্তার করে এবং স্থির পানিতে জন্মায়। শহরায়ণ বৃদ্ধি এবং অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে মশার বংশবিস্তার আরও বেড়ে যাচ্ছে, ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। এই সমস্যার মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর প্রতিকার করা জরুরি।
স্বাস্থ্যসেবা উদ্যোগ
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ডেঙ্গু প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে বর্ষাকালে, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নিয়মিত কীটনাশক ছিটানো প্রয়োজন। স্থানীয় সরকারকেও কঠোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিচ্ছন্নতা নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে মশার বংশবিস্তার কমে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে ডেঙ্গু প্রবণ সময়ে হাসপাতালগুলোকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দিয়ে প্রস্তুত রাখতে হবে, কারণ দ্রুত চিকিৎসা রোগীদের সেরে উঠতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
জনসচেতনতা বৃদ্ধি
ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। মানুষকে বুঝতে হবে যে তাদের আচরণ মশার বংশবিস্তারে প্রভাব ফেলে। সকলের উচিত নিয়মিত পানির পাত্র পরিষ্কার করা, পানির ট্যাঙ্ক ঢেকে রাখা, এবং বর্জ্য থেকে যেন স্থির পানি জমতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা। যেমন, বাতিল টায়ার বা ফুলের টবে পানি জমা এড়িয়ে চলা উচিত। বাড়ির ড্রেন পরিষ্কার রাখা এবং বর্জ্য সঠিকভাবে ফেলা, এসব ছোট পদক্ষেপও বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
সরকারি নীতিমালা ও সমন্বয়
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারি কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সকল নির্মাণ এলাকা, পাবলিক স্থান এবং বাড়িতে মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। সরকার স্বাস্থ্য সংস্থা, এনজিও, এবং স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে অংশীদারিত্বে ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রচার এবং মশারোধী উপকরণ বিতরণ করতে পারে। পাশাপাশি, টিকা এবং মশা নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তির গবেষণায় অর্থায়ন করা উচিত, যা দীর্ঘমেয়াদে এই রোগের প্রতিকার আনতে সহায়ক হবে।
প্রযুক্তির ব্যবহার
নতুন প্রযুক্তি ডেঙ্গু মোকাবেলায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, জেনেটিক্যালি মডিফায়েড মশা ব্যবহার করে মশার সংখ্যা কমানো সম্ভব। ডিজিটাল মানচিত্র ব্যবহার করে সংক্রমণ প্রবণ এলাকাগুলোকে দ্রুত চিহ্নিত করা যেতে পারে, যাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যায়। এছাড়াও, মোবাইল অ্যাপ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধের বার্তা প্রচার ও সতর্কতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।
ডেঙ্গু একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ, কিন্তু এর জন্য ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং সরকারি উদ্যোগ একত্রিত হওয়া প্রয়োজন। সমন্বিত পদক্ষেপ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়ক হতে পারে। নিয়মিত প্রচেষ্টা ও সচেতনতার মাধ্যমে আমরা এই পুনরাবৃত্ত স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলা করতে পারব।