
সদ্যসমাপ্ত অক্টোবর মাসে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রায় ২.৪০ বিলিয়ন বা ২৪০ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। গত বছরের একই মাসে এসেছিল ১.৯৭ বিলিয়ন বা ১৯৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে একক মাস হিসেবে অক্টোবরে দেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বেড়েছে ৪৩ কোটি ডলার বা ২১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। রোববার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুসারে, অক্টোবরের শেষ দিন অথাৎ ৩১ তারিখ এক দিনেই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। আর পুরো মাসজুড়ে পাঠিয়েছেন ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২৮ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে)। সে হিসাবে অক্টোবরে প্রতিদিন গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৭ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত দুটি কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। প্রথমত, আমদানি বিলের আন্ডার-ইনভয়েসিং উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। আগে এ প্রক্রিয়ায় বড় অঙ্কের অর্থ সরিয়ে নেওয়া হলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, হুন্ডির মতো অনানুষ্ঠানিক মাধ্যমে অর্থপাচার অনেকটা কমেছে। ফলে হুন্ডিতে ডলারের চাহিদা কমে সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে বেশি ডলার আসতে শুরু করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, অক্টোবর মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৭২ কোটি ৬১ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ১২ কোটি মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৫৪ কোটি ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৭১ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
তবে এই সময়ে ৯ ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স পাঠাননি প্রবাসীরা। ব্যাংকগুলো হলো- রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাবাক। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেন্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক। আর বিদেশি খাতের মধ্যে রয়েছে- হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।
এদিকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৮.৯৪ বিলিয়ন বা ৮৯৪ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ৭ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে (চার মাসে) দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৬.৮৮ বিলিয়ন বা ৬৮৮ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৮২ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে দেশে রেমিট্যান্স বেশি এসেছে ২৪ হাজার ৭২০ কোটি টাকা বা ২৯.৯৫ শতাংশ।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার এবং সদ্য সমাপ্ত অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রেমিট্যান্স প্রবাহের ঊর্ধ্বগতির ধারা বজায় রয়েছে সদ্য সমাপ্ত অক্টোবর মাসেও। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই ছাড়া প্রত্যেক মাসেই প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। দেশ যখন বেসরকারি খাতের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি, সার এবং পণ্য ইত্যাদি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে রয়েছে, ঠিক রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো দিক বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা। গত ৩০ অক্টোবর শেষে বিপিএম৬ পদ্ধতিতেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ১৯.৮৭ বিলিয়ন ডলারে রয়েছে, এটি বৈদেশিক ঋণের নিশ্চয়তা বাড়াবে বলে মনে করেন তারা।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ হাজার ৩৯২ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এসেছে। এটি এক অর্থবছরে এ যাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার।