
সাইমন :
অবশেষে প্রবীণ সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা করেছেন তিনি। দেশের রাজনীতি, আন্দোলন-সংগ্রাম, উত্থান-পতন প্রত্যক্ষ করেছেন কলম হাতে। কিন্তু জীবনের শেষ প্রহরে এসে তিনি লিখে গেলেন এক খোলা চিঠি, যেখানে উঠে এসেছে দারিদ্র্য, অভিমান আর উপেক্ষার দীর্ঘ কষ্টগাথা।
শেষ লেখায় তিনি লিখেছেন, সাংবাদিকতা মানেই সত্য বলা, আর সেই সত্য বলার ঝুঁকি নিতে হয় ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্যের বিনিময়ে। কিন্তু দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে তিনি পাননি সম্মানজনক বেতন বা স্থায়ী আর্থিক নিরাপত্তা। নিজের অসুস্থতা, সংসারের চাপ, ছেলের চিকিৎসা আর মেয়ের ক্যারিয়ার জটিলতার কথা লিখতে লিখতে তিনি আক্ষেপ করেছেন—সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়ে তিনি লাভবান হতে পারেননি, বরং বাকি জীবন কেটেছে ঋণ আর অভাবের বোঝা নিয়ে।
খোলা চিঠিতে বিভুরঞ্জন সরকার তুলে ধরেন তাঁর সংগ্রামী জীবন। ছাত্রজীবন থেকেই বাম রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। এক সময় দৈনিক আজাদ, সংবাদ, রূপালীসহ বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছেন। সম্পাদনা করেছেন সাপ্তাহিক ‘চলতিপত্র’, ‘মৃদুভাষণ’ ও দৈনিক মাতৃভূমি। জনপ্রিয় সাপ্তাহিক যায়যায়দিনে তার ছদ্মনামে প্রকাশিত লেখা পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল। কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি লিখেছেন—“আমার লেখা নাকি পাঠক আর খায় না।”
চিঠিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সম্পাদক ও সহকর্মীর প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, কারও কাছেই প্রকৃত অর্থে প্রাপ্য সম্মান বা সহায়তা পাননি। এমনকি প্রকাশিত বইয়ের রয়্যালটিও মেলেনি তাঁর হাতে।
২১ আগস্ট ভোরে লেখা সেই খোলা চিঠিতে তিনি নিজের জীবনের সারসংক্ষেপ টেনে এনে লিখেছেন—
“আমার জীবনে কোনো সাফল্যের গল্প নেই। সাংবাদিক হিসেবেও কোথাও শক্ত ডাল ধরতে পারিনি। দুঃখই হোক আমার জীবনের শেষ সঙ্গী। আর পৃথিবীর সকল প্রাণী সুখী হোক।”
প্রবীণ এ সাংবাদিকের মরদেহ উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই সহকর্মী সাংবাদিক মহলে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। অনেকেই বলছেন, বিভুরঞ্জন সরকারের শেষ চিঠি আজকের সাংবাদিক সমাজের জন্য এক নির্মম দলিল—যেখানে উঠে এসেছে পেশার সংকট, অবমূল্যায়ন আর অপ্রাপ্তির দীর্ঘশ্বাস।