
নিজস্ব প্রতিবেদক :
নির্বাচনের টাইমফ্রেম নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কয়েক মাস পরই। সরকারের ভেতরে কিছু ব্যক্তির ‘ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার বাসনা’ এবং ‘নির্বাচন হলেই গুরুত্ব কমে যাবে এবং এ সরকারের মেয়াদকালে সুবিধা নেয়ার চেতনা’য় কিছু দল সংস্কারের পর নির্বাচনের আওয়াজ তোলে। কিন্তু ঐতিহাসিক লন্ডন বৈঠকের পর রোজার আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বার্তা পায় জনগণ।
নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রায় ১২ কোটি ভোটার আছেন ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে। সবার ধারণা, প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কারের পর প্রচলিত পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে।
কিন্তু সরকার গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে হঠাৎ করে প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) বাংলায় ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব’ নির্বাচন শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ভোট নিতে না পারা ভোটাররা যখন ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে তখন হঠাৎ অচেনা পদ্ধতির নির্বাচন ইস্যু নিয়ে এত মাতামাতি কেন? ’৯১-এর পর থেকে বিএনপির অনুকম্পায় সংসদে জামায়াতের সামান্য জনপ্রতিনিধিত্ব ছাড়া যাদের তেমন কোনো প্রতিনিধিত্ব ছিল না; তারা হঠাৎ করে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবি তুলছেন এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সে দাবি অধিক গুরুত্ব দিয়ে দিনের পর দিন বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে। নেপথ্যের রহস্য কি?
পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের নামে তারা কি ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সংসদে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন? নাকি জনসমর্থন না থাকায় সারা দেশের প্রাপ্ত ভোটে নিজেদের সংসদে যাওয়া নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন? ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার পদে নির্বাচন করে বিজয়ী হওয়ার মতো জনসমর্থন নেই এমন নেতারা পিআর পদ্ধতির নির্বাচনে এমপি হয়ে সংসদে গিয়ে সুবিধা পেলেও জনগণের স্বার্থ কতটুকু রক্ষা হবে?
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালানো এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে প্রতিবেশী একটি দেশ আওয়ামী লীগ দোসরদের দিয়ে একের পর এক বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে। প্রতিটি চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর এখন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব আগামী সংসদে রাখার নীলনকশা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যমে।
নির্বাচন কমিশনের চার নির্বাচনের প্রাপ্ত ভোট ও আসনের হিসাব কররে দেখা যায় জামায়াত নিরপেক্ষ হিসেবে বিবেচিত চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে প্রতিটি নির্বাচনে গড়ে ১০টি আসন পেয়েছেন। এতে গতে আসন দাঁড়ায় ৩ শতাংশের একটু বেশি।
অন্যান্য দলগুলোর আসনের হিসাব করলে তা ক্যালকুলেটরে ধরবে না। অথচ জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এসব দলের পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবির অধিক গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনকে অনিশ্চিত এবং রাজনীতিকে ঘোলাতে করার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পিআর পদ্ধতি উপযুক্ত নয় জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় এবং ইতোপূর্বে আমাদের সঙ্গে সংস্কার কমিশনের যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে, সেই পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের মধ্যে আমরা কোনো ঐকমত্য পাইনি।
তাছাড়া, বাংলাদেশে আনুপাতিক হারে নির্বাচনের ইতিহাস নাই এবং সংসদীয় রাজনীতি এবং সংসদীয় নির্বাচনের ইতিহাস নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এটি একটি নতুন ধারণা।
যার জন্য অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা পৃথিবীর বহু দেশে হয়েছে। আমরা দেখেছি, এই দেশের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়। আনুপাতিক হারে নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো সংসদীয় এলাকার ভোটাররা জানবেন না যে, কে তাদের এমপি হবেন। তা ছাড়া প্রয়োজনে এমপিদের কাছে যে তারা যাবেন, নির্ধারিত কোনো ব্যক্তিকে খুঁজে পাবেন না।