
নিজেস্ব প্রতিবেদক :
চৌদ্দ বিঘার জমির উপর করা প্রায় সাড়ে সাতশো গাছের একটি আমবাগান কেটে ফেলায় কথিত ছাত্রদল নেতা লিমন হাওলাদার ( রিমন ) ও তার ভাই ইমরুল কায়েস হাওলাদারের নামে মামলা করেন জমি মালিকের ছেলে সামিউল ইসলাম জীম (২০)। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে একটি হত্যা ও বৈষম্য বিরোধী মামলায় জীমকে ফাঁসান অভিযুক্ত লিমন ও ইমরুল।
ভুক্তভোগী জীমের অভিযোগ, লিমন আগে আওয়ামিলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও বর্তমানে বিএনপি নেতা বনে গেছেন। বিএনপি’র নাম ব্যাবহার করে চাঁদাবাজি ও মামলা বানিজ্য করে বেড়াচ্ছেন।
লিমন ও তার ভাই ইমরুল কায়েস আমাদের থেকে দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দেয়ায় আমাদের চৌদ্দ বিঘা জমির আমগাছ কেটে ফেলেছে তারা। ওই ঘটনায় গত ১৯-এপ্রিল জাজিরা থানায় বিশজন’কে বিবাদী করে একটি গাছকাটা মামলা করি আমি (মামলা নং-১৪/২৫)। ওই মামলায় ৫ ও ৬ নং আসামি ছিলো লিমন ও ইমরুল। মামলার পর থেকেই লিমন ও তার ভাই ইমরুল কায়েস আমাকেসহ আমার পরিবারের সবাইকে অন্তত দশটি মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে আসছিলো।
এরপর গত ২৩-এপ্রিল তারিখে আমাদের এলাকায় কামরুল চোকদার নামে একজনের লাশ পাওয়া যায়। কামরুলের লাশ উদ্ধারের পরপরই লিমন ও তার ভাই ইমরুল, কামরুলের বাবা দাদন চোকদারের সাথে আঠার মতো লেগে থেকে মামলায় সহোযোগিতার নাম করে প্ররোচনার মাধ্যমে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে আমাকেও ওই মামলায় আসামি করে।
সম্প্রতি শিবচরে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ঘটনা দেখিয়ে আরও একটি মামলা হয় (যার নাম্বার-১৬/২৫) ওই মামলায় আমাকে ৯৬-নং আসামি করা হয়। অথচ আমি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকা ছিলাম এবং আমার বন্ধুদের সাথে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলাম।
জীমের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জীম ঢাকায় বসবাস করে এবং ঢাকাতেই পড়ালেখা করে।ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন এন্ড টেকনোলজি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এবং কোনো ধরনের রাজনীতির সাথেও জড়িত ছিলো না। আন্দোলনের সময় জীম তার ভার্সিটি ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন এন্ড টেকনোলজি বন্ধুদের সাথে সরাসরি অংশগ্রহন করে ছিলো। লিমন এবং ইমরুল কায়েসের সাথে শত্রুতা করার জন্যেই এসব মামলা হচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, লিমন ও তার ভাই ইমরুল কায়েস বিএনপির নাম ব্যাবহার করে বিভিন্ন মামলা বানিজ্যের সাথে জড়িত। যে কোনো মামলা হলেই থানার সামনে দেখা যায় লিমনকে। তদবিরের পাশাপাশি বিভিন্ন মিথ্যা ও প্রতারণামূলক মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানি করাই তার পেশা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে লিমনের সাথে যোগাযোগ করতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার এবং তার ভাই ইমরুল কায়েসের ব্যাবহৃত মোবাইল নাম্বার বন্ধ দেখাচ্ছে।
এ মামলার লিখিত এজাহার পাঠ করে দেখা যায় তথাকথিত মামলার বাদী যাদের আহত হওয়ার কথা উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছে তাদের কারো সাথেই তার কোনরকম আত্মীয়তার সম্পর্কও নাই। আর বাদীর বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার দেওয়া নাম্বারে কল করলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। এতে করে সন্দেহাতীতভাবে বোঝা যায় মামলার বাদীও সাজানো বাদী।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে পুলিশ মহাপরিদর্শক ( আইজিপি) মহোদয়ের সুর্নিদষ্ট নির্দেশনা আছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন কোন ঘটনার মামলা রেকর্ড করার পূর্বে তা ভালোভাবে যাচাই বাছাই করে নিতে হবে এবং মামলায় যাদেরকে আসামী করা হয়েছে তাদেরকে গ্রেপ্তারের পূর্বে তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সাথে জড়িত আছে এই মর্মে উপযুক্ত প্রমাণাদি থাকতে হবে। কিন্তু এসকল বিষয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শিবচর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রতন শেখ সরাসরি থানায় মামলা রেকর্ড করেই বিবাদীদের গ্রেপ্তার করা শুরু করে দিয়েছেন এবং সকল বিবাদীদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দিতেছেন। এখানে কোন অদৃশ্য ক্ষমতার দাপটে এবং কোন এক শক্তির তাদেবারী করে এসকল কাজ করতেছেন শিবচর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রতন শেখ। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার ব্যাবহৃত সরকারি নাম্বারটিতে একাধিকার কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেন নাই । মাদারীপুর জেলা পুলিশ সুপার ( এসপি) ব্যাবহৃত সরকারি নাম্বারে কল করলে তিনিও কল রিসিভ করেন নাই।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বললে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের পরে লিমন নিজেকে শিবচর উপজেলা ছাত্রদলের নেতা পরিচয়ে এবং তার মামা বিএনপির নেতা এই পরিচয় ব্যাবহার করে প্রশাসনকে ব্যাবহার করে যা খুশি তাই করে যাইতেছে আর এই বিষয়ে কেউ কোন কথা বললেই তাকে নানাভাবে হয়রানী করতেছে ও বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় আসামী করতেছে।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে অবস্হান করে সংগৃহীত সকল তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায় এখানে ২ টি পরিবারের দ্বন্দ্বের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে লিমন ও ইমরুল কোন পরিবারের আত্মীয়স্বজন না হওয়া সত্ত্বেও একটি পরিবারের পক্ষ নিয়ে আরেকটি পরিবারকে ঘায়েল ও নিঃশ্ব করার লক্ষ্যে কাজ করে যাইতেছে এবং একের পর এক মিথ্যা মামলা সাজিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতেছে।
এসব মামলা বানিজ্য ও মিথ্যা মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানির বিষয়ে কথা হয় মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা একাধিক আইনজীবীদের সাথে। তারা জানান, এসব মামলার ব্যাপারে সরকারের স্পষ্ট নির্দেশনা হচ্ছে ঘটনায় জড়িত নয় এমন কাউকে আসামি করা যাবে না। এসব মামলা গ্রহণের পূর্বে অধিকতর তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি যদি কেউ অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হওয়ার জন্য অনৈতিকভাবে কাউকে আসামি করে থাকে এবং তা প্রমানিত হয় তাদের বিরুদ্ধেও ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।