
ছাত্রলীগের পিটুনিতে নিহত হওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ‘এই শতাব্দীর শহীদ তিতুমীর’ বলে আখ্যায়িত করেছেন আমার দেশ পত্রিকার সাবেক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। আবরারের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ সোমবার রাজধানীর পলাশির মোড়ে আয়োজিত এক স্মরণসভায় তিনি একথা বলেন। স্মরণসভার আয়োজন করে ‘আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদ’।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৫৪ বছরের সংগ্রামে শহীদ আবরার ফাহাদ টার্নিং পয়েন্ট। শহীদ আবরার ফাহাদ আমাদের সার্বভৌমত্বের পক্ষে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বিরোধী প্রতীক। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু হলেন ফ্যাসিবাদের প্রতীক ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বৈরশাসক।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের তরুণ সমাজ হাসিনার পতনের সংগ্রামে প্রথম ধাপে জয়লাভ করেছে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে ভারতীয় অগ্রাসনের বিরুদ্ধে এখনো জয়লাভ করতে পারেনি। আমাদের জনগণকে সাথে নিয়ে এই আগ্রাসন রুখে দিতে হবে।’
সভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘গত ১৫ বছরে যে সংবিধান আমাদের উপর চেপে বসেছিল, যে সংবিধান আবরার ফাহাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী, যে সংবিধান জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শত শত শহীদ হওয়ার জন্য দায়ী, যে সংবিধান হাজার হাজার মানুষের হাহাকারের জন্য দায়ী, সে সংবিধান এখনো বাংলাদেশ রাষ্ট্রে কীভাবে বিরাজমান? আমলারা জয় বাংলার স্টেটমেন্ট দিয়ে বেড়াচ্ছে। আমরা চাই এই সংবিধান অবিলম্বে বাতিল হোক।’
আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, আবরার ফাহাদ দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। প্রথম দুই বছর হত্যার বিচারের জন্য আমাদেরকে বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে। রায়ের তিন বছর পার হলেও আমরা এখনও হত্যার বিচার পাইনি। যে আট স্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে সেটা যেন যেকোনো বাধা বিপত্তিতেও টিকে থাকে।
আবরার ফাহাদ নিহতের ঘটনায় ২০২০ সালে এই স্তম্ভ নির্মাণ করেন ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। সে সময় এটি ভেঙে গুড়িয়ে দেয় পুলিশ। আজ এই স্তম্ভের পুনর্নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে সংগঠনটির আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন আবরার ফাহাদ হত্যার দিনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘আগ্রাসন বিরোধী দিবস’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক আখতার হোসেন বলেন, ‘আবরার ফাহাদ একক কোনো ব্যক্তি নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক। আবরার ফাহাদের খুনীদের গ্রেপ্তার করলেও বিচার প্রক্রিয়ায় এখনো সম্পন্ন হয়নি, অতিদ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে। খুনীদের মধ্যে যারা বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদেরকেও গ্রেপ্তার হতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো দেশের আগ্রাসন চলতে দেওয়া হবে না। ভারতীয় আগ্রাসনকে বাংলাদেশ মেনে নিবে না। ভারতের জনগণের সাথে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ৭ অক্টোবরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আগ্রাসন বিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।’ স্মরণসভায় অন্যদের মধ্যে আবরার ফাহাদের সহপাঠী, ছোটভাই আবরার ফাইয়াজসহ অনেকেই বক্তব্য দেন।