
শহিদ সরকার :
গাজীপুরের সিনিয়র সাংবাদিক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের নামে ফেসবুকসহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও মানহানিকর অপপ্রচার করার অভিযোগে দায়ের করা দুই কোটি টাকার মানহানি মামলায় আসামী হান্নান মোল্লা ওরফে আব্দুল হান্নান মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এর বিজ্ঞ বিচারক সোমবার (৪ আগস্ট) উভয়পক্ষের শুনানী শেষে বাদীপক্ষের অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ প্রদান করেন। মামলার পরবর্তী তারিখ থেকে অভিযোগের বিষয়ে বিচার শুরু হবে।
আদালতে শুনানীর সময় মামলার বাদী ও বিবাদী উপস্থিত ছিলেন। এসময় আসামীপক্ষের আইনজীবি মামলা অভিযোগ গঠন না করার আবেদন করেন। পরে বাদী পক্ষের আইনজীবি এড. লুৎফর রহমান বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগ গঠনের আবেদন জানিয়ে মামলার বিভিন্ন অভিযোগ ও অভিযোগের পক্ষে তথ্য প্রমাণ বিজ্ঞ আদালতে তুলে ধরেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবি আদালতে বলেন, আসামী দীর্ঘদিন ধরে অত্র মামলার বাদীর বিরুদ্ধে ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন/ডিজিটাল মাধ্যমে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও মনগড়া, মানহানীকর অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। আসামী অত্র মামলার ঘটনার দিনসহ বিভিন্ন সময়ে বাদীকে হেয় করা ও হয়রানী করার উদ্দেশ্যে সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, সরকারের উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তা, গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট ই মেইলে বাদীকে রাজাকারসহ বিভিন্ন মিথ্যা ভিত্তিহীন প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন। বাদীকে গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রবেশে নিষেধা যার দালিলিক প্রমাণ অত্র মামলার সাথে দাখিল করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত উভপক্ষের বক্তব্য শুনে অভিযোগ/চার্জ গঠনের আদেশ দিয়েছেন।
মামলার আসামী হান্নান মোল্লা (৪০) গাজীপুরের সদর উপজেলার বাড়ীয়া ইউনিয়নের পাকুরিয়া গ্রামের মোঃ মোতালিব মোল্লার ছেলে। তিনি বর্তমানে গাজীপুর মহানগরীর ২৯৬/৩ জোড়পকুর পাড় এলাকায় বসবাস করেন।
মামলার বাদী গাজীপুরের একজন প্রতিষ্ঠিত ও স্বনামধন্য সাংবাদিক। তিনি গণবাণী ডট কম অনলাইন পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। তিনি দৈনিক ‘আজকের পত্রিকা’ ও ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি। তিনি ‘গ্রামীণসেবা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’-এর চেয়ারম্যান এবং ‘বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল’, গাজীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং ‘এনভায়নমেন্টাল জার্নালিজম নেটওয়ার্ক’-এর সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বাদীর আইনজীবি সূত্র জানায়, আসামী হান্নান মোল্লা দীর্ঘদিন যাবত বাদীর সুনাম নষ্ট করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে নানা রকম মিথ্যা, ভিত্তিহীন, মনগড়া বক্তব্য-অডিও-ভিডিও সৃষ্টি করে মানহানিকর প্রচার-প্রচারণা করে আসছে। এসব মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও মানহানিকর অপপ্রচার করার অভিযোগে বাদী, গাজীপুরের সিনিয়র সাংবাদিক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে প্রতিকারের আশায় চলতি বছরের গত ২১ এপ্রিল রোববার গাজীপুরের বিজ্ঞ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সদর আমলি) আদালতে দুই কোটি টাকার মানহানির একটি মামলা (সিআর মোকাদ্দমার নং ৫৭২/২০২৪) দায়ের করেন। ঐদিন বিজ্ঞ বিজ্ঞ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সদর আমলি) আদালতের বিচারক মো: কায়সারুল ইসলাম বাদীপক্ষের শুনানীর পর অভিযোগ আমলে নিয়ে উপস্থাপিত তথ্য প্রমাণ ও বক্তব্যে সন্তোষ্ট হয়ে আসামীর বিরুদ্ধে সমন জারি করেছিলেন।
সূত্র জানায়, পরে মামলার আসামী নির্ধারিত তারিখে আদালতে হাজির হয়ে আদালত থেকে জামিন লাভ করে। তারপর মামলাটি স্থানান্তর হয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ (বিচারিক আদালত) এ বিচারের জন্য আসে। এখানে প্রথম তারিখে আসামী হাজির হয়ে জামিন লাভ করে। পরবর্তীতে গত ৯ ডিসেম্বর ছিল মামলার চার্জ (অভিযোগ) গঠনের শুনানী। কিন্তু এদিন আসামী আদালতে হাজির হয়নি। পরে বাদীপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির আদেশ প্রদান করেন। এভাবে মামলার আসামী ইতিপূর্বে একাধিকবার নির্ধারিত তারিখে আদালতে অনুপস্থিত থাকায় অভিযোগ গঠনের শুনানী পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল।
মামলা সূত্রে জানা যায়, মামলায় বাদী অভিযোগ করেছেন, মামলার আসামি আব্দুল হান্নান ওরফে হান্নান মোল্লা একজন প্রতারক, জালিয়াত, অপরের সুনাম ক্ষুন্নকারী, মান সম্মান হরণকারী, দালাল প্রকৃতির লোক। সে সামাজিক রীতিনীতি ও আইন কানুনের ধার ধারে না।
উক্ত আসামি, গাজীপুর সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর স্বাক্ষর জাল করিয়া ভুয়া নামজারি ও জমা ভাগ পর্চা সৃষ্টি করিলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) গাজীপুর সদর, বাদী হইয়া তৎকালীন জয়দেবপুর থানায় উক্ত আসামির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন, যার নম্বর ৬১(০৫)১১। উক্ত মামলায় আসামি গ্রেপ্তার হইলে অত্র মামলার বাদী তাহার গণবাণী ডট কম অনলাইন পত্রিকায় মামলা ও গ্রেপ্তার বিষয়ে আসামীর নামে সংবাদ প্রকাশ করেন। সেই কারণে আসামি বাদীর প্রতি ক্ষিপ্ত হয় এবং উক্ত সংবাদ প্রকাশের পর হইতে অদ্যাবধি বাদীকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা ও মানহানির উদ্দেশ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে বাদীর নামে অহরহ মিথ্যা বানোয়াট, মানহানিকর বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশ করে আসছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ১০-৪-২০২৪ ইং তারিখ দিবাগত রাত ১:১১ ঘটিকায় সাংবাদিক আসাদকে গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার জন্য আবেদন জানিয়ে মামলার আসামী একাধিক ই মেইল প্রেরণ করে। এসব ই-মেইলে সাংবাদিক আসাদ সম্পর্কে বিভিন্ন অশালীন, অশোভন, মানহানিকর, মিথ্যা-ভিত্তীহীন অভিযোগ সম্বলিত বক্তব্য লিখা হয়। যা গাজীপুরের জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ও ব্যক্তিদের নিকট ই মেইল করে। উক্ত সকল লেখা প্রকাশ হওয়ায় বাদী দারুনভাবে মর্মাহত হন, বাদীর সুনাম ও মান সম্মান বিনষ্ট হয় এবং এতে বাদীর অনুমান দুই কোটি টাকার মানহানি হয়।
মামলায় আরো অভিযোগ করা হয়, আসামী শুধু উক্ত মানহানিকর লেখাই প্রকাশ করে নাই। সে একইরূপ মানহানিকর বক্তব্য সম্বলিত লেখা ই-মেইল এর মাধ্যমে গাজীপুরের মাননীয় জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনারসহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যক্তিবর্গের নিকট প্রেরণ করে এবং উক্ত সকল ই-মেইল এর সিসি বাদির ব্যক্তিগত ই-মেইল এড্রেস এবং গণবাণী ডট কম পত্রিকার ই-মেইল এড্রেস এ-ও প্রেরণ করে। উক্ত সকল কার্যদ্বারা আসামি বাদীর মানহানি করেছে এবং সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের নিকট বাদিকে হেয় করা হয়েছে।
মামলার বাদী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে উপরোক্ত কারণাধীনে আসামীর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় মামলা আমলে নিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আসামীকে পুলিশ দ্বারা ধৃত করে আদালতে আনয়নপূর্বক হাজত বাস করার আদেশ দানের জন্য বিজ্ঞ আদালতে আবেদন করেন।