
মুন্সীগঞ্জে দাবদাহে বেড়েছে তালের শাঁসের কদর
মোঃ সুমন হোসেন,ক্রাইম রিপোর্টারঃ
এ মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে হরেক রকমের সুস্বাদু ফল পাওয়া যায়। এ তালিকায় রয়েছে-আম,জাম,কাঁঠাল ও লিচু।ছাড়াও অন্যতম আরেকটি ভিন্নধর্মী ফল তালের শাঁস।যার নরম অংশটি খুবই সুস্বাদু।দাবদাহে তালের এই শাঁস মানুষের কাছে খুবই প্রিয়।এটির রয়েছে বেশ পুষ্টিগুণও।
গ্রামগঞ্জ হয়ে তাল এখন মিলছে শহরের অলিগলিতেও।তালের শাঁস খাওয়ার এখনই সময়। অনেক ফল যখন ফরমালিনের বিষে নীল,সেখানে তালের শাঁসে ফরমালিনের ছোঁয়া লাগেনি।যে কারণে দীর্ঘদিন তাল রেখে দিলেও নষ্ট হয় না।
তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ। গরমে অস্থির পথচারীদের এক মুহূর্তের জন্য হলেও তৃষ্ণায় স্বস্তি এনে দিচ্ছে কচি তালের শাঁস। ডাবের দাম বেড়ে যাওয়ায়,তার পরিবর্তে কচি তালের শাঁস খেয়ে পানির চাহিদা মেটাচ্ছেন অনেকে।বছরের শুরুতে মৌসুমি এ ফলের চাহিদা বেড়েছে।মিষ্টি ও রসালো পানির কারণে বিক্রিও হচ্ছে ভালো দামে।
সরেজমিনে দেখা যায়,মুন্সীগঞ্জ সদরের বিভিন্ন স্থানে এখন বিক্রি হচ্ছে কচি তালের শাঁস। ছোট বড় প্রকার ভেদে প্রতিটির দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি করছে বিক্রেতারা।
পাইকারি তাল বিক্রেতা মোঃ জাহাঙ্গীর(৪০)বলেন,গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে গাছ চুক্তিতে তাল সংগ্রহ করি।গত বছরের চেয়ে এবার দামটা একটু বেশি।আকারভেদে প্রতি হাজার কচি তালের দাম ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা।
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভায় খুচরা তাল শাঁস বিক্রেতা মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেন,গরম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে এখন তালের শাঁসের ভালো চাহিদা রয়েছে।একটি ১০ থেকে ২০ টাকায় দরে বিক্রি করছি।বিক্রিও বেশ ভালো।তবে বেশি দামে ক্রয় করার কারণে লাভ কম হচ্ছে।
বিক্রেতারা আরো জানান,তাল গাছ থেকে ফল কেটে আনা একটি কষ্টকর বিষয়।কাটার জন্য অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিয়ে কেটে আনতে হয়।একটি গাছে ৩০০ থেকে ৩৫০টি ফল পাওয়া যায়।জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম দিকে বিক্রি শুরু হয়,চলে পুরো মাস জুড়ে।
আসলে বাণিজ্যিক ভাবে এই অঞ্চলে তাল গাছের তেমন বাগান নেই।সাধারণত বসত বাড়ী বা রাস্তার পাশে মানুষ তালগাছ রোপণ করে থাকে। তালগাছ লম্বা হওয়ার কারণে বজ্রপাত রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।এছাড়াও ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাতাসের গতি রোধ করে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
প্রচণ্ড গরমে কচি তালের শাঁস এবং এর ভেতরের মিষ্টি পানি তৃষ্ণা মিটিয়ে শরীরে এনে দেয় আরামদায়ক অনুভূতি।
চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে,তালের শাঁস যেমন সুস্বাদু তেমনই পুষ্টিগুণেও সেরা।তালের শাঁসে রয়েছে হাজারো পুষ্টিগুণ।এই মৌসুমে তালের শাঁস খেলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি মিলবে,এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো,তালের শাঁসে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায।ক্যান্সারের মতো মরণ ব্যাধি রোগ থেকেও রক্ষা করে রসালো এই তালের শাঁস।তালের শাঁস আমাদের স্মৃতিশক্তি ভালো রাখে এবং শারীরিক
স্বাস্থ্য রক্ষা করে থাকে।বমি ভাব আর মুখের অরুচিও দূর করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।তালের শাঁসে ক্যালসিয়াম থাকায় এটি দাঁতের জন্য অনেক ভালো।দাঁতের এনামেল ভালো রাখে এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করে।তালের শাঁস হাড়কে শক্তিশালী করে তোলে।কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দূরীকরণে দারুণ ভূমিকা রাখে।তালের শাঁসে আছে পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম,আয়রন,সালফার, সেলেনিয়াম,ম্যাঙ্গানিজ,কপার এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো বেশ কিছু উপকারী উপাদান।যা আমাদের চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী।এছাড়াও চোখের এলার্জি সহ অন্যান্য চোখের রোগের প্রকোপ কমাতে তাল অনেক কার্যকরী।তালের শাঁসে আশ থাকায় এটি হজমে সহায়ক।হাড় গঠনেও দারুণ ভূমিকা রাখে এটি।কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দুর করে।মুখের রুচি বাড়ায়।এতে সুগার কম থাকায় ডায়াবেটিক রোগীরাও খেতে পারে।