
খুলনার একাধিক গ্রামীণ এলাকায় প্রধান সড়ক কাঁচা মাটির তৈরি হওয়ায় প্রতিদিনই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। সামান্য বর্ষায় এসব রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে ওঠে, ফলে হাঁটু সমান কাদার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পড়ে।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় মাগুরখালী ইউনিয়নের বাঘারদাইড় থেকে গাজীনগর পর্যন্ত সাড়ে ৩ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা এতটাই বেহাল, সে রাস্তায় মানুষের চালাচল একেবারেই অসম্ভব।
অথচ এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ৫টি গ্রামের প্রায় এক হাজার মানুষকে যাতায়াত করতে হয়। এ ছাড়া এ সড়ক পাড়ি দিয়ে ওই গ্রামগুলোর শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়েও যেতে হয়।
সমীর নামে ওই এলাকার বাসিন্দা বলেন, ‘বর্ষা শুরু হলে আমাদের এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। হাঁটু সমান কাদার মধ্য দিয়ে চলাফেরা করতে গিয়ে প্রায়ই পিছলে পড়ে যাই। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের জন্য এটি খুবই বিপজ্জনক।’
তিনি বলেন, শীতের সময়ও এই রাস্তার অবস্থা খুব একটা ভালো থাকে না। শুকিয়ে যাওয়া মাটির রাস্তা ধূলায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সেই ধূলা উড়ে নাকেমুখে ঢুকে যায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ডুমুরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ওই সড়কটিতে ইটের সলিং নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।
একই অবস্থা রয়েছে খুলনার রূপসা উপজেলার টিএসবি ইউনিয়নের পাথরঘাটা গ্রামের একটি সড়কে। ৬ বছর ধরে সংস্কার না করায় ভাঙা-চোরা, কাদা-ধূলির সড়কে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পথচারীরা।
স্থানীয়রা জানান, এই সড়কটি দিয়ে দৈনিক ১০টি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে। এ ছাড়া সড়কের পাশে থাকা দুটি বিদ্যালয়ের ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর যাতায়াতের একমাত্র পথও এটি।
সড়কের পার্শ্ববর্তী পাথরঘাটা এ এইচ এস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. লিয়াকত আলী হাওলাদার বলেন, ‘সামান্য বর্ষা হলেই হাঁটু সমান কাদা হয়ে যায় এই সড়কটিতে। কত নেতা, সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে আমরা গিয়েছি, তার ঠিক নেই। তবে বারবার শুনি কাজ হবে, কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে না।’
এলজিইডি খুলনা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে জানা গেছে, ‘খুলনা বিভাগ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় পাথরঘাটা গ্রামে ১ দশমিক ৬৮৬ কিলোমিটার (১৬৮৬ মিটার) সড়কের জন্য বরাদ্দ করা হয়। ই-টেন্ডারের পর ২০২৩ সালের ২১ মার্চ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোসার্স এস আর ট্রেডার্সের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনা করা হয়। ওই কাজের চুক্তি মূল্য ছিল ১ কোটি ৪৬ লাখ ৯০ হাজার ৩১৮ টাকা। ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
এ প্রসঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা প্রকৌশলী এস এম ওয়াহিদুজ্জামান আমাকে প্রস্তাব করেছেন, সড়কের বরাদ্দের মধ্যে বেট কাটা, বালু ফেলা ও সাব বেজ করা লাগবে না। এতে যে টাকা বেঁচে যাবে, তার ৬০ শতাংশ তাকে দিয়ে দিতে হবে। এই প্রস্তাবে আমি রাজি না হওয়ায় আমার কাজ বাতিল করা হয়েছে।’
তবে রূপসা উপজেলা প্রকৌশলী এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এই সড়কের এস্টিমেটের (কাজের সম্ভাব্য পরিমাণ ও পরিব্যয় নির্ণয়) কিছু সংশোধন করে ঢাকাতে পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়া পাইকগাছা উপজেলার লস্কর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চৌমুহনী বাজার পর্যন্ত সড়কের মাঝের প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের ইটের সলিং তুলে ফেলায় সেই সড়কটিও কর্দমাক্ত রয়েছে।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বিভাগীয় পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২২ সালের বছরের ৫ মে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু করেন সংসদ সদস্য সেই সময়ের স্থানীয় সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজ। ওই কাজের চুক্তিমূল্য ২ কোটি ১৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সালের ২০ মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ছিল মাত্র ৩০ শতাংশ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় কাজটি বাতিল করা হয়।
স্থানিয়রা জানিয়েছেন, ঠিকাদার ইটের রাস্তার সোলিং উঠিয়ে ফেলায় বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত হয়ে যায় রাস্তা। পরে আর কাজ না করায় রাস্তার অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে।
এ প্রসঙ্গে এলজিইডি খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম সরদার বলেন, চলটি অর্থবছরে আমাদের ১০০ কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণ ও ১৫০ কিলোমিটার সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। যেসব সড়ক বেশি খারাপ অবস্থায় রয়েছে, সেগুলো অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নির্মাণ বা সংস্কারের কাজ করা হচ্ছে।