
সৌভিক পোদ্দার-ঝিনাইদহ :
ঝিনাইদহ-৩ আসনটি মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলার ১৭ ইউনিয়ন এবং দুই পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এরমধ্যে কোটচাঁদপুরে এক পৌরসভা ও পাঁচ ইউনিয়ন এবং মহেশপুরে একটি পৌরসভা ও ১২ ইউনিয়ন রয়েছে। এ আসনে বিএনপি থেকে দলীয় মনোয়ন প্রত্যাশি মেহেদী হাসান রনি। তিনি ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পান। রনির পিতা ঝিনাইদহ-৩ আসন থেকে চার বার নির্বাচিত বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত শহিদুল ইসলাম মাস্টার।
২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থান চুড়ান্ত রুপ নিলে স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকার প্রধান শেখ হাসিনা পালিয়ে যান। দেশবাসির দীর্ঘ ১৭ বছরের আন্দোলন সফলতা পায়। দির্ঘ বছর ভোটাধিকার হারানো জাতি একটি অবাধ সুষ্ঠ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। ফলে ভোটের মাঠে সরব হয় জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশিরা। এদের মধ্যে একজন তরুণ সংগঠক মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান রনি। তিনি পিতার দেখানো পথে জণগণের উন্নয়নে কাজ করতে চান।
রনির পিতা শহিদুল ইসলাম মাস্টার সংসদ সদস্য থাকাকালীন নির্বাচনী এলাকায় যোগাযোগ, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যপক ভূমিকা রাখেন। যা ছিল স্বাধীনতা উত্তর মহেশপুর কোটচাঁদপুরের ইতিহাসে রেকর্ড। উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া ইনডিয়া সীমান্ত ঘেষা উপজেলা মহেশপুর ও কোটচাঁদপুরে এমন উন্নয়ন আগে এবং পরে কেউ করেননি। সবথেকে বেশি উন্নয়ন করেন গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ব্রীজ, কালভার্টসহ বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী অবকাঠামো। তার সময়ে উল্লেকযোগ্য উন্নয়ন ছিল বিদ্যুৎ খাতে।
রনি ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২০০০ সালে মাধ্যমিক ও ২০০২ সালে ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর অষ্ট্রেলিয়ার কার্ডান ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স শেষ করেন। ২০০৯ সালে দেশে ফিরে বাবার দেখানো পথে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন। এরপর ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত উপজেলা বিএনপি সিনিয়র সহ সাধারন সম্পাদক হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে থানা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব এবং ২০২২ সালে উপজেলা বিএনপির সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেন। ওই বছর আওয়ামীলীগ সরকার ভোট ডাকাতি করে সরকার গঠন করে। ২০২৪ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে।
বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী রনি দলীয় কর্মসূচী পালনসহ তার নির্বাচিত এলাকার শহর থেকে প্রত্যান্ত অঞ্চলের গ্রামে গ্রামে গিয়ে গণসংযোগ করছেন। বিএনপির ভবারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা সম্বলিত লিফলেট বিতরণ ও সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচীসহ দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচী পালনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ঝিনাইদহ-৩ আসন দু’টি উপজেলা নিয়ে গঠিত হলেও স্বাধীনতার পর থেকে বারোটি নির্বাচনের প্রতিবারই ভারত সীমান্তবর্তি উপজেলা মহেশপুর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়নের নেতৃত্ব দেন। কোটচাঁদপুর থেকে মহেশপুর উপজেলায় ইউনিয়ন ও ভোটার সংখ্যা ডাবল হওয়ায় এ উপজেলার প্রার্থীরা নির্বাচনে বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে। এবারও তারই ধারাবাহিকতায় এ আসনে মেহেদী হাসান রনিকে দল মনোনয়ন দেবে বলে ভোটার ও নেতাকর্মীরা মনে করছেন।
এ আসনটিতে ৯১, ৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থী শহিদুল ইসলাম মাস্টার নির্বাচিত হলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুল আজম খান চঞ্চল নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচিত হন। বিগত নির্বাচনগুলোতে এ আসনে জামায়াত-বিএনপি জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিলেও ২০০৮ সালে আলাদা প্রার্থী দেওয়ায় আসনটি হাতছাড়া হয়। এরপর একতরফা ভোটে ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নবী নেওয়াজ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে শফিকুল আজম খান চঞ্চল সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। তবে উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়ন করতে পারেননি তারা। তারা ক্ষমতায় এসে টেন্ডারবাজি ও লুটপাটের রাজনীতি শুরু করেন। উন্নয়ন বঞ্চিত হন নির্বাচনী এলাকার সাধারন মানুষ।
কিন্তু এলাকাবাসি বলছেন, রনি পিতা সাবেক সাংসদ শহিদুল ইসলাম মাস্টার ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সময় তার নির্বাচনী এলাকায় ২৮৭ গ্রাম বিদ্যুতায়ন করেন। শিক্ষানুরাগি এ সাংসদ নিজ উদ্দ্যোগে আটটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং মহেশপুর ডিগ্রী কলেজ সরকারিকরণ করেন। অসংখ্য প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ প্রতি ইউনিয়নে দুইটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও অসংখ্য মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান ও শ্মশান প্রতিষ্ঠা করেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে সাতটি বড় ব্রীজসহ অসংখ্য ব্রীজ ও কালভার্ট ও নির্মাণ করেন। তার সময়ে নির্মিত হয় মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলায় জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম ও ডাকবাংলা ও থানা ভবন। মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহুতল ভবন নির্মাণসহ ৫০ শয্যা থেকে ১০০ উন্নীত করেন।
উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক দবির উদ্দীন বিশ্বাস বলেন, উদীয়মান নেতা মেহেদী হাসান রনি। রনি বাবার মত রাতদিন নির্বাচনী এলাকার মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দেখা করে কথা বলেন, তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেন। রনি বাবার মত কর্মীবান্ধব একজন নেতা।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান রনি জানান, বাবার উৎসাহে ছাত্রদলে আমার রাজনৈতিক জীবন শুরু। আমি বাবার কাছ শিখেছি কিভাবে সাধারন মানুষের পাশে থেকে তাদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করতে হয়। আজ বাবা নেই, বাবার দেখানো পথে ঝিনাইদহ-৩ আসনের জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। ঝিনাইদহ-৩ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবো। মনোয়ন দিলে জয়ি হবো ইনশাল্লাহ। দল মনোনয়ন না দিলেও দলীয় সিদ্ধান্তে আজীবন সংগঠন ও মানুষের জন্য কাজ করে যাব।