
মার্কিন প্রেসিডেন্টদের অনেকেই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে বিচিত্র সব পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এগুলোর কিছু কিছু এতটাই অস্বাভাবিক যে বিশ্বাসই করতে চাইবে না মন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে আজ আমরা পরিচয় করিয়ে দেব এমনই ১০ মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং তাঁদের বিচিত্র পেশার সঙ্গে। লেখাটি কোনো পেশাই যে ফেলনা নয়, তা আরও একবার মনে করিয়ে দেবে আপনাকে।

আব্রাহাম লিংকন
আব্রাহাম লিংকন ছিলেন একটি বারের মালিক। রীতিমতো লাইসেন্স করা বারটেন্ডার ছিলেন তিনি। ‘শিকাগোয়েস্টে’র দেওয়া তথ্য বলছে, ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট ইলিনয়ের নিউ সালেমে একটি ব্যবসা শুরু করেন। ব্যারি অ্যান্ড লিংকন নামের দোকানটির মালিক ছিলেন আব্রাহাম লিংকন এবং তাঁর পুরোনো বন্ধু উইলিয়াম এফ ব্যারি। বিভিন্ন দরকারি জিনিসপত্র বিক্রির পাশাপাশি ছিল মদ্যপানের ব্যবস্থাও।
১৮৩৩ সালে ব্যারি অ্যান্ড লিংকন মদ বিক্রির লাইসেন্স পায়। ব্র্যান্ডি, ওয়াইন ও হুইস্কি বিক্রি শুরু করেন তাঁরা। তবে পরে এই ব্যবসা ছেড়ে নিউ সালেমের পোস্টমাস্টার হিসেবে যোগ দেন লিংকন। এমনকি কম বয়সে কিছুদিন বেড়া তৈরির জন্য গাছ কেটে টুকরাও করেন তিনি।

অ্যান্ড্রু জনসন
লিংকনের সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসন পরে দেশের ১৭তম প্রেসিডেন্ট হোন। সিএনএন জানিয়েছে, কিশোর বয়সেই দরজির দোকানে মাকে সহায়তা করতেন এই ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট। পরে অবশ্য সাউথ ক্যারোলাইনা ও টেনিসিতে নিজেই মূল দরজি হিসেবে কাজ করেন।

জেমস গার্লফিল্ড
যুক্তরাষ্ট্রের ২০তম প্রেসিডেন্ট জেমস গার্লফিল্ডের মেয়াদটা একেবারে সংক্ষিপ্ত করে দেয় ১৮৮১ সালে এক গুপ্তঘাতকের বুলেট।
বালক বয়সে রীতিমতো অদ্ভুত এক পেশায় জড়িত ছিলেন গার্লফিল্ড। ওহাইওতে, মানে তাঁর জন্মস্থানে গার্লফিল্ডের চাচাতো ভাইয়ের একটা বোট ছিল। ওই সময় খালে চলা এ ধরনের বোটকে টেনে নিয়ে যেত ঘোড়া ও খচ্চর। এগুলোকে বোটের সঙ্গে বাঁধা হতো এবং খালের পাশ দিয়ে চলে নৌকা টেনে নিয়ে যেত প্রাণীগুলো। এমন এক বোটের খচ্চর চালাতেন গার্লফিল্ড। এ জন্য মাসে পেতেন আট ডলার।

বেঞ্জামিন হ্যারিসন
১৮৮৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ২৩তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন বেঞ্জামিন হ্যারিসন। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে যখন আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হননি, তখন একটি আদালতের ঘোষক হিসেবে কাজ করেন। অর্থাৎ আদালতের বিভিন্ন ঘোষণা দিতেন তিনি। এ জন্য দৈনিক পেতেন আড়াই ডলার।

গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড
যুক্তরাষ্ট্রের ২২তম ও ২৪তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড। ১৮৭১ থেকে ১৮৭৪ সাল পর্যন্ত নিউইয়র্কের এরি কাউন্টির শেরিফ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ সময় তাঁর একটি কাজ খুব সমালোচিত হয়। একবার নয়, দুবার এটা করেন। ক্লিভল্যান্ড কাউকে দিয়ে করানোর বদলে নিজেই দুই অপরাধীকে ফাঁসিতে ঝোলান।
এ ঘটনা তাকে তাড়া করতে ফিরে আসে পরে। ১৮৮৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ক্লিভল্যান্ডকে ‘বাফেলোর জল্লাদ’ হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিত নিন্দুকেরা।

হ্যারি ট্রুম্যান
যুক্তরাষ্ট্রের ৩৩তম প্রেসিডেন্ট হওয়ার অনেক আগে কেনসাস সিটিতে ছেলেদের নানা পোশাক, টুপি, বোতাম, জিপারের মতো ছোটখাটো সামগ্রীর একটি দোকান চালাতেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরিচয় হওয়া এক সেনার সঙ্গে যৌথভাবে দোকানটি চালাতেন।
১৯২০-এর দশকে মন্দার সময় দোকানটি বন্ধ হয়ে যায়। ট্রুম্যানও নতুন পেশা হিসেবে রাজনীতিকে বেছে নিতে বাধ্য হন।

রোনাল্ড রিগ্যান
১৪ বছর বয়সে রোনাল্ড রিগ্যান রিংলিং ব্রাদার্স নামের একটি সার্কাসে অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন, ঘণ্টাপ্রতি .২৫ ডলার মজুরিতে। এক বছর বাদে ইলিনয়ের ডিক্সনের বাইরে রক রিভারে লাইফগার্ডের চাকরি নেন। সাতটি গ্রীষ্ম সপ্তাহে সাত দিন ১২ ঘণ্টা করে এই চাকরি করেন।
পরে অভিনেতা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। পরিণত হন হলিউডের বিখ্যাত অভিনেতায়। ১৯৩৭ সালে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের সঙ্গে সাত বছরের এক চুক্তি করলেন, সপ্তাহে ২০০ ডলার সম্মানীতে। মোট ৫০টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন রোনাল্ড রিগ্যান।
১৯৮১ সালে ৬৯ বছর বয়সে ৪০তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রোনাল্ড রিগ্যান।