
হিজবুল্লাহ কয়েক মাস আগে তাইওয়ানের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ হাজার পেজার অর্ডার করেছিল। এই চালানের তিন হাজার পেজারের সিরিজ বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন নয় ব্যক্তি। আহত হয়েছেন তিন হাজারেরও বেশি মানুষ।
তাইওয়ান থেকে কেনার পর হিজবুল্লাহর কাছে এই পেজারগুলো পৌঁছানোর আগেই ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ প্রতিটি ডিভাইসের সঙ্গে অল্প পরিমাণ বিস্ফোরক উপকরণ সংযুক্ত করে দেয়। এমনটাই দাবি করেছেন লেবাননের এক জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা।
লেবাননের জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, হিজবুল্লাহ তাইওয়ান ভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গোল্ড অ্যাপোলোর কাছ থেকে পাঁচ হাজার ‘বিপার’ (পেজার) অর্ডার করেছিল। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এগুলো এ বছরের শুরুতে লেবাননে এসে পৌঁছায়।
ইতোমধ্যে তাইওয়ানের সেই প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, তারা এই পেজারগুলো নির্মাণ করে না। একটি ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানে এগুলো তৈরি হয়। গোল্ড অ্যাপোলো সেই ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই ব্যবসাটি পরিচালনা করে থাকে।
লেবাননের সূত্র আরও জানায়, এই ডিভাইসগুলোকে ‘উৎপাদনের সময়ই’ ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা রূপান্তর করে দেয়। ডিভাইসগুলোর ভেতর মোসাদ একটি বোর্ড জুড়ে দেয়, যার সঙ্গে বিস্ফোরক উপকরণ যুক্ত ছিল।
কোড পাঠিয়ে এগুলোকে সচল করা যায়। এ ধরনের প্রযুক্তি শনাক্ত করা খুবই ঝামেলার। এমন কী, অন্য ডিভাইস বা স্ক্যানার দিয়েও শনাক্ত করা যায় না- যোগ করেন তিনি।
এই পেজারগুলো এপ৯২৪ মডেলের। অন্যান্য পেজারের মতো, এই ওয়্যারলেস ডিভাইসগুলো একে অপরকে টেক্সট মেসেজ পাঠাতে পারে। তবে এগুলো দিয়ে ফোন করা যায় না। স্মার্টফোন ও মোবাইল ফোন বাজারে আসার আগে কিছু সময়ের জন্য পেজার খুব জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে বহুল ব্যবহৃত হতো।
এই চালানের তিন হাজার পেজারে কোডযুক্ত বার্তা পাঠানোর পর সেগুলো বিস্ফোরিত হয়। লেবাননে বেলা ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে পেজারগুলোয় একটি বার্তা এসেছিল।
দেখে মনে হচ্ছিল, বার্তাটি হিজবুল্লাহর নেতার কাছ থেকে এসেছে। আসলে বার্তাটি বিস্ফোরকগুলোকে সক্রিয় করে তুলেছিল। বিস্ফোরণের আগে কয়েক সেকেন্ডের জন্য যন্ত্রগুলোয় ‘বিপ’ বেজে ওঠে।
অভিনব এ হামলার পরিকল্পনার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে হিজবুল্লাহ। তবে এ অভিযান সম্পর্কে তাদের ধারণা কী, সে সম্পর্কে খুব একটা বিস্তারিত বলা হয়নি। তবে ইসরায়েল এই হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। এমনকি এর পেছনে নিজেদের দায়ও স্বীকার করেনি তারা।